দেলোয়ার হোসেন। হাঁটার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছেন দু'বছর আগে। অসুস্থতার নির্মম পরিহাসে জীবন বাঁচাতে কেটে ফেলতে হয় পা। এই অঘটনেই প্রতিবন্ধী তকমা যুক্ত হয় দেলোয়ারের কপালে। অসুস্থতার সময় খুইয়ে ফেলেন সব পুঁজি। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে এক পায়েই ছুটে চলেন তিনি।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় পা-হারানো খাইরুলের পরিণতিও দেলোয়ারের মতোই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি তার নিত্যদিনকার রুটিন। এক পায়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাত্রীকে পৌঁছে দেন গন্তব্যে। উভয়েই মন্তব্য, কারো কাছে হাত পেতে নয়, নিজ আয়ে চলতে চান আমৃত্যু।
দেলোয়ার-খাইরুলেই এই গল্পই শেষ নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে যাননি এরতম আরও অনেকে। কেউ কেউ তো জন্ম থেকেই প্রতিকূল পরিবেশে বইছেন জীবনতরী। রাজধানীর সড়কগুলোতেও দেখা যায়, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী বহু মানুষকে। যারা সরাসরি সাহায্য না চেয়ে হকারির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আজীবন লড়াই-সংগ্রামে থাকা এই মানুষগুলো বলছেন, নামমাত্র ভাতা দিয়ে পরিবার তো দূরের কথা নিজের চলা সম্ভব নয়। বার্ধক্যে পৌঁছে যেন অসহায় অবস্থায় পড়তে না হয় সেজন্য বাসস্থান নিশ্চিতে সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ঋণের দাবি তাদের।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কর্মজীবী সোসাইটির সমন্বয়ক বলছেন, একমাত্র সরকারি সহায়তা পেলেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের দুঃখ মোচন সম্ভব।
প্রতিবন্ধকতা নামক শব্দ দিয়ে আড়াল করে রাখা হয় এমন অসংখ্য মানুষকে। যে কারণে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের উপস্থিতি দেখা যায় না। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনীতির চাকায় আরও গতি আসতো। এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
সরকারি তথ্যমতে, শারীরিক-মানসিক, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি, শ্রবণসহ ১২ ক্যাটাগরিতে নারী-পুরুষ ও হিজড়া মিলিয়ে দেশে মোট নিবন্ধিত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৮শ ৮৮ জন। সারাদেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং ৪৫টি ভ্রাম্যমাণ থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে যাদের সেবা দিচ্ছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সরকারি এই সংস্থাটি বলছে, সম্মিলিত প্রয়াসেই দূর করতে হবে সব প্রতিবন্ধকতা।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আজমুল হক বলেন, ‘সরকারি বিল্ডিং আছে, হাসপাতাল আছে, আমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে যদি প্রতিবন্ধী বান্ধব করতে পারি, তারা যদি সেখানে সহজে যেতে পারে একটা সার্কেলে শেষ করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর উদ্যাপন করা হয় বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাতীয়ভাবে দিনটি উদ্যাপন করে বাংলাদেশ।