দেশে এখন
0

১৭৫ কোটি টাকায় নির্মিত ফেরিঘাট চালু হয়নি আড়াই বছরেও

জামালপুরে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফেরিঘাট টার্মিনাল অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অপরিকল্পিত ড্রেজিং এর কারণে নাব্যতা সংকটে আড়াই বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি ফেরি চলাচল। এই নৌপথে চলাচলকারীরা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যমুনা নদী পার হচ্ছেন। দুর্ভোগ লাঘবে ফেরি চালু করে টার্মিনালটি সচল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

২০০১ সালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট থেকে গাইবান্ধার বালাসীঘাট পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। নদীর দুই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবিতে আবারও এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। ২০১৮ সালে দুই পাড়ে নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল।

তবে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং না করায় ২৬ কিলোমিটার এই নৌপথে আড়াই বছরেও শুরু হয়নি ফেরি চলাচল। তাই ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী দীর্ঘ এই নদীপথ পাড়ি দেন। তার ওপর ঘাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে রয়েছে জোর করে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।

একজন যাত্রী বলেন, 'বালাসীঘাট, বাহাদুরাবাদঘাট দুইটা টার্মিনাল বানিয়েছে। এখানে যে কত কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে কিন্তু কোনো উপকারেই আসেনি। এটা না করে যদি একটা ব্রিজের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমাদের এখানে এসে বসে থাকতে হতো না।'

অন্য একজন যাত্রী বলেন, 'আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি, আমাদের দিকে কেউ নজর রাখবে না। আসলে আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষ অবহেলিত। এখনও সেই অবহেলিতই আছি।'

তবে যাত্রী পারাপারে অধিক ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছে ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।

দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ নৌ ঘাটের টিকিট মাস্টার মো. সোবাহান আলী বলেন, 'তিন বছর হলে এই ভাড়া ৩০০ টাকাই আছে। মাঝখানে ছাত্ররা এসে ই ভাড়া ৫০ টাকা কমিয়েছিল। পরে দেখা যায় অনেক টাকা লস হয়। তারাই আবার সাত দিন কালেকশন করে বলছে যে ঠিক ছে আপনারা উঠান।'

বিগত ৩০ বছর যাবৎ আব্দুল করিম দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ নৌ ঘাটে দোকান করে সংসার চালাচ্ছেন। এই নৌ ঘাট হয়ে আগে উত্তরাঞ্চলের আট থেকে ১০টি জেলার মানুষ যাতায়াত করতো। বর্তমানে যাত্রী পারাপার অনেক কমে গেছে। ফলে তার মতো অন্য দোকানিদের ব্যবসায়ও পড়েছে ভাটা।

আব্দুল করিম বলেনছেন, ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে একটা যাত্রী যাওয়ার সময় তারাও খুব জুলুমের সাথে যায়। এখন যাত্রী হয়ে গেছে অর্ধেক। আর এতে ব্যবসা আমাদের অনেক কমে গেছে।'

নাগরিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, রাস্তা চওড়া না করে অপরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করায় এই প্রকল্প কোনো কাজেই আসছে না। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, নাব্যতা সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি।

জামালপুর নাগরিক অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, 'কর্মকর্তারা যদি পরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করতেন। এবং পরিকল্পিতভাবে যদি বাহাদুরাবাদঘাট থেকে যে রুটটি দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত সেটি বড় করা হতো তাহলে এই রুটে বহু মানুষ যাতায়াত করতো। আর এটা বেশি লাভজনক হতো।'

জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, 'বিভিন্ন মিটিংয়ে সেগুলো জেলাগুলোর যে সমন্বয় সভা আছে বা আমরা যে ফোরামের মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করা যায় সেগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়েই বলেছি। পাশাপাশি আমরা আবারও চিঠি লিখবো যাতে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে ড্রেজিং করে আমাদের ফেরিগুলো যেন চলাচল করতে পারে।'

অচল ফেরিঘাট টার্মিনালটি সচল করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা জামালপুরবাসীর।

এসএস