রনি শেখের মা বলেন, ‘আমার তো একটাই সন্তান। এখন তো ইনকাম করারও কেউ নেই।’
মায়ের এ কান্না সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি বিদ্ধ করেছে একমাত্র ছেলে রনি শেখকে। মুখের কয়েকটি দাঁত ভেঙ্গে গুলি আটকে আছে তার ঘাড়ে। প্রচণ্ড ব্যথা আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন রনি শেখ।
রনির গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি থানার গোসপুর ইউনিয়নের দোতরকাঠি গ্রামে। ৫আগস্ট রাজধানীর নর্দা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। প্রাইভেট হাসপাতালে ১৮ দিন আইসিইউতে থাকাসহ বিছানায় পড়ে ছিলেন আড়াই মাস। এ সময়ে পরিবারকে হারাতে হয়েছে চাষের জমি ও দুধের গরু। পড়তে হয়েছে ঋণের কবলে।
মা নাজমা বেগম বলেন, ‘পপুলার হাসপাতালে বিল আসছে ১২ লাখ টাকার মতো। পরে ছাত্রদের ধরে শুধু মেডিসিন বিল ৪ লাখ টাকা দিয়েছি। ইউনাইটেডে দিয়েছি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা।'
রনি রাজধানীর গুলশানে একটি প্রাইভেট অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার ছিলেন। ৬ মাস বয়সী সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাবা এনামুল হক মিরপুরের একটি বাসায় নিরাপত্তা প্রহরী। ঘাড়ে ঘাতকের ছোড়া গুলি বয়ে বেড়ানো এই যোদ্ধা জানালেন সে দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
রনি শেখ বলেন, ‘ওদের গুলি ছোড়া দেখে আমরা সবাই দৌড় দিয়েছি। আমাদের সাথে অনেকজনের গুলি লেগেছে। আমার গুলি লেগেছে পরে। গুলিটা ল্যাম্প পোস্টে লাগার পরে আমার দিকে এসে মুখের ভিতর ঢুকে গেছে।’
বর্তমানে রনি শেখকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে ইবনে সিনা হাসপাতাল কল্যাণপুর শাখা। শুরু থেকেই অর্থোপেডিক ও স্পাইন সার্জন ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও স্পাইন সার্জনের ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘যদি বুলেট বের করতে গিয়ে তার আরো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এইটা না বের করাই ভালো। বর্তমানে রনির প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে আহতদের সেবা পাওয়া নিয়েই ছিল এক প্রকার অনিশ্চয়তা। কিন্তু তারপরও আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান থেকে বিচ্যুত হয়নি বহু বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক। যে কারণে অনেক হাসপাতালকেই পড়তে হয় নানা আইনি ঝামেলায়। এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই সেবা দিয়ে গেছেন তারা।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এজিএম মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে আমরা ফ্রি ট্রিটমেন্ট করেছি। আমাদের হাসপাতালে ২০০শ’ বেশি রোগি ছিল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুতর আহত রনির মতো অনেকের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত বিদেশে গেছেন মাত্র ৭ জন। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও অন্তত ২০-২৫ জন। যদিও সরকারি ব্যবস্থাপনার দীর্ঘসূত্রিতায় উন্নত চিকিৎসা প্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছে।