"নতুন বাংলাদেশ" কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের ২২তম পৃষ্ঠায়, অন্তর্বর্তী সরকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে টিআইবি বলছে, গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষায় গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে এ সরকার সই করলেও, পুলিশ ও ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে আয়না ঘরে নির্যাতনের আলামত নষ্টের অভিযোগ রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, গুমের তদন্ত ও ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কমিশনে এরই মধ্যে ১ হাজার ৬শটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কর্তৃত্ববাদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, চাঁদাবাজিসহ আর্থিক খাত দখলের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ডিজিএফআই, ডিবি, এনএসআই, এনটিএমসির মত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এভাবে, প্রায় ৫৬ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে, রাজনীতি, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, অনিয়ম দুর্নীতিসহ ৮টি দিকের নানা অসংগতি ও মন্তব্য তুলে ধরে সংস্থাটি। রাজনৈতিক প্রেক্ষিত নিয়ে টিআইবির পর্যালোচনা, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিতর্কিত।
গণহত্যার বিচার নিয়ে সংস্থাটি বলছে, ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পুরোনো ধারা বিদ্যমান।
বিভিন্ন সহিংসতায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত, রাজনৈতিক যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া বা না দেওয়ার চর্চা অব্যাহত বলেও উঠে আসে সংস্থাটির প্রতিবেদনে। বলা হয়, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংবাদপত্র, বেসরকারি সংস্থা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের সংখ্যায় এখনও উল্লেখযোগ্য তারতম্য বিদ্যমান।
এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংস্থার প্রধানের কাছে প্রশ্ন ছিলো, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কি তাহলে টিআইবি হতাশ?
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ জায়গাগুলোতে আমরা আরো বেশি ইতিবাচক। যেসব জায়গায় গ্যাপ রয়েছে সেগুলো আমরা বের করেছি। তবে হতাশ হওয়ার মতো কোনো কিছু আমরা এখনো দেখিনি। আমরা সেটা বলছিও না। অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অনেক কিছুই হয়তো তাদের সরাসরি কর্তৃত্বের মধ্যে রয়েছে, আবার অনেক কিছুই নেই।’
রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচনী রোডম্যাপ, অভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি নিয়ে কথা বলেন টিআইবি প্রধান। সংস্থাটি মনে করে, প্রশাসন পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি আছে।
তিনি বলেনম, ‘এটা তো রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা। সবসময় সেটায় পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। সেটা এগিয়ে আনা যাবে, পিছিয়ে নেয়া যাবে যদি সমঝোতা থাকে।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বেসরকারি সংস্থাটির প্রধান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ৩ মাস পরও ফ্যাসিজমের পতন মেনে নিতে পারছে না প্রতিবেশী দেশের সরকার।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে, টিআইবি জানায়, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে যা ইতিবাচক। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী গোষ্ঠীর কাছ থেকে যেসব ঋণ নেয়া হচ্ছে তার শর্তসহ সবকিছু জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত।