বেলা ১১টার পরও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবসহ সবকটি কক্ষে তালা ঝুলছে। এটি মোটামুটি প্রতিদিনের চিত্র। এদিকে জন্ম সনদের জন্য পরিষদ আঙিনায় স্থানীয়দের অপেক্ষার যেন শেষ নেই।
স্থানীয় একজন বলেন, 'কয়েকদিন হলে নিয়মিত ঘুরছি। চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ নেই। সব জায়গায় তালা লাগানো। নামজারির জন্য কাজ করতে আসছি। এটা না করতে পারলে নামজারি ক্যান্সেল হয়ে যাবে।'
এমন দুর্ভোগ জেলার প্রায় সব ইউনিয়নের। নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদসহ পরিষদের বিভিন্ন সেবার জন্য অপেক্ষা করেও অনেকেই পাচ্ছে না সমাধান। কিছু ইউনিয়ন পরিষদে কার্যক্রম চললেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসেন খেয়াল খুশিমতো।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো গা ঢাকা দেয় ফেনীর প্রায় সকল চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। কয়েকটিতে ঘটে হামলার ঘটনাও। এরপর ২০ আগস্ট ভয়াবহ বন্যায় ডুবে যায় ইউনিয়ন পরিষদগুলো। যাতে নষ্ট হয় গুরুত্বপূর্ণ নথিসহ নানা সরঞ্জাম। বিঘ্ন ঘটে নাগরিক সেবার। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ হলেও রয়েছে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'প্রতিনিধি না থাকায় সবাই অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। এই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবার উপজেলা পরিষদে পাঠাচ্ছে।'
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা কাজ করতে হলে একদিন পর বা পরের দিন পাইতাম। চেয়ারম্যান না থাকাতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা ঠিকমতো কাজ করে পাচ্ছি না।'
তবে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. বাতেন।
তিনি বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের যে আর্থিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা, আমরা তাদের দিয়েছি। সেই ক্ষমতাবলে এই ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিশেষ করে জনসেবা চালিয়ে নেয়ার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে।'
এদিকে পালিয়ে না যাওয়া তিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, ৫ আগস্টের পর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল আলম বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে জনগণের সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কার্যক্রম এখানে পরিচালিত হয়। সেখানে চেয়ারম্যান না থাকলে নাগরিকদের শুধু হয়রানি না, তারা তো অসহায় হয়ে পরে।'
জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ও দাগনভূঁঞা উপজেলার সদর এবং রামনগর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৪০ চেয়ারম্যানই পলাতক।