এ ব্যক্তিদের দাবি তারা জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহত হয়েছে। বহু মানুষের ধারে ধারে ঘুরেও পাননি ন্যূনতম সহায়তা। সবশেষে এসেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে।
তবে প্রাপ্ত তথ্য বলছে এদের সবাই ভুয়া। এ যেমন ময়মনসিংহের নয়ন শিকদার। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে যা স্পষ্ট। ফটোশপের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্নস্থানে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে এসেছেন সাহায্য নিতে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে-এমআইএস-ভেরিফাইড তার।
ভুয়া আহত নয়ন বলেন, ‘আমি জুলাই ফাউন্ডেশনে এসেছিলাম কিছু সাহায্য পাওয়ার জন্য, ভেবেছিলাম আমি গরিব মানুষ হিসেবে কিছু টাকা পেলে উপকার হবে।’
পোশাক শ্রমিক রুমান মিয়ার দাবি আহত হয়েছেন আশুলিয়ায়। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়েছেন সাহায্য। এ পুরো কাজে তাকে সাহায্য করে কথিত সমন্বয়ক।
একজন ভুয়া সমন্বয়ক বলেন, ‘আহত দেখিয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনে সকল কাগজপত্র সম্পন্ন করিয়ে আর্থিক সাহায্য নিয়ে দিয়েছি। উনি আমাকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হিসেবে দিয়েছেন।’
ডিসেম্বরে মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় রিকশাচালক বেল্লাল। আন্দোলনে আহত দেখিয়ে নিয়েছেন সাহায্য। যা বেরিয়ে আসে অধিক তদন্তে।
এদিকে, জুলাই আন্দোলনে আহতদের পরিবারগুলো আর্থিক সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। কারণ জানালেন ফাউন্ডেশনের এ কর্মকর্তা।
জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অ্যাডমিন মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘গাছ থেকে পড়ে গেছে কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে কাগজ দেখাচ্ছে জুলাইয়ের আন্দোলনে আহত হিসেবে। দায়িত্বরত সিভিল সার্জন ভালো করে কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই তুলে দিচ্ছে। আমাদের কাছে আসার পর যখন আমরা যাচাই বাছাই করছি তখন দেখতে পাচ্ছি যে সে তো এমআইএসভুক্ত হওয়ারই যোগ্য না। এরকম বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন কর তারা এমআইএসভুক্ত হচ্ছে। এজন্য আমরা কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের সহায়তার জন্য গঠিত হয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এমআইএস তথ্য বিভ্রান্তিতে ফেলছে ফাউন্ডেশনকে। এতে জুলাই ফাউন্ডেশনের ভেরিফিকেশন সেলের চাপ বাড়ছে।
ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, ‘এমআইএস মানে আহত ব্যক্তি সরকারি আহতদের তালিকায় তালিকাভুক্ত কি না, সেটা আগে যাচাই করা হয়। তারপর মেডিকেল ডকুমেন্টসগুলো যাচাই করা হয়।’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ভেরিফিকেশন হেড মো. হারুন আর রশিদ বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন হিসেবে যারা কাজ করছে যেমন- ছাত্র প্রতিনিধি, জেলা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক মিলে তাদের একটা কমিটি আছে। ওনাদের মাধ্যমেই ঠিকঠাক এমআইএস ভেরিফিকেশন হওয়ার কথা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা ঠিকঠাক হচ্ছে না।’
যে কারো সরকারি ডাটাবেজে নিবন্ধন করার সুযোগ নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে প্রতারক চক্র। প্রতিরোধে নিহতদের পাশাপাশি আহতদের নামের গেজেট প্রকাশ করার দাবি ফাউন্ডেশনের।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার এইচআর ও অ্যাডমিন মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘ভুল করে অনেকেই টাকা নিয়ে গেছে, আমরা কিছু টাকা উদ্ধারও করেছি। বাকি টাকা উদ্ধার করার জন্য আমাদের একটা টিম কাজ করছে।’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহিদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় ৭১.৪৮ কোটি টাকা ৪৪০৫ টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩০ কোটি টাকা পেয়েছেন ৬৮৬ টি শহিদ পরিবার। ৩৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৯ জন আহত ব্যক্তি।