২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এক তরফা ভোটের তকমা পেয়েছিল দশম জাতীয় সেই সংসদ নির্বাচন। ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর বাকি ১৪৬ আসনের জন্য ভোটের খরচ ছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াত বিহীন। যেখানে আসন প্রতি ভোটের খরচ পড়েছে ২ কোটি টাকারও বেশি।
২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাতের ভোটের তকমা পেয়েছিল যে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা আরো বাড়ে। আর চব্বিশের ডামি নির্বাচন খ্যাত দ্বাদশ সংসদের ভোটে খরচ ছাড়িয়ে যায় ২ হাজার কোটি টাকারও উপরে। যেখানে আসন প্রতি খরচ পড়েছে ৭ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ৫২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল মুদ্রণ ও কেনাকাটায়। বাকি পুরো টাকাটাই গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাবদ ব্যয়।
এর বাইরে ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে ভোটার তালিকা হালনাগাদে খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে বিগত ৩টি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পেছনেই রাষ্ট্রের গচ্ছা গেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই পুরো টাকাটাকেই অপচয় বলছেন, নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘যারা নির্বাচন পরিচালনার সাথে জড়িত থাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ অনেক সময় তাদের যে ডিমান্ড তার পরিপ্রেক্ষিতে এই বাজেটগুলো বরাদ্দ হয়ে থাকে। এখানে যে যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই অনেকটা টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রের বিরাট একটা অর্থ নষ্ট করা হয়েছে। একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করলে তখন এই অর্থের একটা ভ্যালিডিটি থাকতো। একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সে যেভাবে চেয়েছে সেভাবে নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের কেউতো মনে করে না তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য যে কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশনও এখন বিগত ৩টি নির্বাচনের ব্যয় পর্যালোচনা করছেন। এক্ষেত্রে কোথায় কী পরিমাণ টাকা অপচয়, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘যে অর্থ অপচয় হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাহলে কেন ব্যয় হয়েছে তার সবগুলো জিনিসই চলে আসবে।’
জনগণের টাকা ব্যয় করে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট সবাই শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও মন্তব্য এই বিশ্লেষকদের।