পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন
0

নভেম্বর থেকে যেখানে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন সেখানেই অভিযান

অক্টোবর মাসের শুরুতেই পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়েছে সারাদেশের সুপারশপে। আসছে নভেম্বরে যার পরিধি বাড়বে অন্যান্য বাজারেও। সাধারণ ক্রেতারা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ব্যবসায়ীরাদের দাবি বিকল্প ব্যাগের জোগান বাড়ানোর। মন্ত্রণালয় বলছে, পলিথিন নিষিদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি বিকল্প তৈরির উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যেখানে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন হয় সেখানেও পহেলা নভেম্বর থেকে অভিযান চলবে।’

পণ্য কিনলেই পলিথিন ফ্রি। কাঁচাবাজার থেকে মুদি কিংবা ফলমূল। সবকিছুই আবৃত পলিথিনের ব্যাগে। মন সায় না দিলেও বাধ্য হয়েই ব্যবহার করেন অনেকেই। নিষিদ্ধ সত্ত্বেও পলিথিন প্রীতি পিছু ছাড়ছে না।

আব্দুল বারী, কারওয়ান বাজার থেকে রোজকার বাজারের প্রতিটি পণ্যই পলিথিনে ভর্তি করে বাসায় ফিরছেন। তবে একটু সচেতন হলে সব পণ্যের ঠাঁই হতে পারতো পরিবেশবান্ধব কোন ব্যাগে।

ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘পাটের ব্যাগ তো আমরা পাইনা দোকানে সবসময়। সব জায়গায় পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হয়। হাতের নাগালে পাটের ব্যাগ পেলে আমরা সচেতন হবো।’

আসছে নভেম্বরে কাঁচাবাজার থেকে পলিথিন বন্ধের ঘোষণায় আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতারা স্বাগত জানালেও বিক্রেতারা বলছেন, বিকল্প ব্যাগের ব্যবস্থা করতে হবে আগে।

ফল বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা করে দিলে আমরা পলিথিন বন্ধ করবো। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ’ টাকার পলিথিন দরকার পরে। পলিথিন না থাকলে আমাদের এই টাকা বেঁচে গেল।’

২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে সংশোধন এনে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, কেউ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড কিংবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। তবে পরবর্তীতে এ আইনের কার্যকারিতা দেখা যায়নি খুব একটা।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধ ঘোষণার পরও বদলায়নি চিত্র। পাইকারি বাজারে দেখা যায়, হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। কেউ কেউ গোপনেও বিক্রি করছেন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বিকল্প ব্যবস্থা না করলে মিলবে না সমাধান।

পলিথিন বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘অনেক মানুষ পলিথিনের সঙ্গে জড়িত। হুট করে এইটা বন্ধ করলে এইটা সম্ভব হবে না যদি বিকল্প না ব্যবস্থা করে।’

পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের আধিক্য কমাতে এর উৎপাদনের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ জরুরি।

পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘উৎপাদন পর্যায়ে পলিথিন বন্ধ না হলে এর ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। উৎপাদনের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করে বিকল্প দিকে যেতে হবে।’

ভিন্ন চিত্র সুপারশপগুলোতে। অক্টোবরের শুরু থেকে বন্ধ হয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। দেয়া হচ্ছে পাট, কাগজ, সুতায় তৈরি নানারকম ব্যাগ। যদিও ক্রেতাকেই আকারভেদে এই ব্যাগের দাম মেটাতে হচ্ছে সুপারশপে।

ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘দামটা কমাতে হবে। যেটা আমরা এখানে ১২ টাকা করে নিচ্ছি সেটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কেনা সম্ভব না।’

বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী নিতে পারছে না। আরেকটা ব্যাপার ছিল আগে যেই ব্যাগগুলো নিতো সেগুলো ফ্রিতে নিতো। তবে এখন তো টাকা দিয়ে ব্যাগ নিতে হচ্ছে।’

পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, একটি পলিথিন তৈরিতে ব্যবহার হয় প্রায় ১৮টি রাসায়নিক পদার্থ। যার মধ্যে ১২টিই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এতে মিশ্রিত ক্যাডমিয়ামসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের কারণে শরীরে ক্যান্সার, চর্মরোগের মতো জটিল নানা রোগ হতে পারে। যা ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে। তাই পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কঠোর আইন কার্যকর করার পাশাপাশি বিকল্প উৎস ও উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ সহযোগী অধ্যাপক আসিব আহমেদ বলেন, ‘পলিথিনের ব্যাগ যদি একটা ওপেন স্পেসে থাকে তাহলে সেখান থেকে আল্ট্রা বায়োলেট রশ্মি তৈরি হতে পারে। সেহেতু এইটা ক্ষতিকারক পরিবেশের জন্য।’

পলিথিন নিষিদ্ধে শিগগিরই অভিযানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা। বলেন, পলিথিনের ক্ষতি মোকাবিলায় নেয়া হবে জেল-জরিমানাসহ শাস্তিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যারা পলিথিন ব্যাগ তৈরি করে তারা কিন্তু শুধু পলিথিন শপিং ব্যাগ বানাই না তারা অন্যান্য সামগ্রীও বানাই। সুতরাং তারা পলিথিন ব্যাগ বানানো বন্ধ করে দিলে তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে সেটা মোটেও সত্যি না। যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন সকল প্লাস্টিকের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এমনটা না শুধু পলিথিন শপিং ব্যাগের উপর। যেখানে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন হয় সেখানেও পহেলা নভেম্বর থেকে অভিযান চলবে।’

পলিথিনের আগ্রাসন ও ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও জোর দেয়ার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

ইএ