চাঁদপুর সদরের উত্তর গোবিন্দিয়ার জেলে দিদার মিজান। গেল ৩০ বছর ধরে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরে সংসার চলছে তার। একই সাথে তার নৌকা করে মাছ ধরে জীবন চলে ৮-১০ জন জেলের।
শেষ বিকেলে পরিবারকে বিদায় দিয়ে ঘর থেকে বের হন জেলে দিদার। তার আগে অন্যান্য জেলেদের খবর দেন মুঠোফোনে। জানান, নদীতে আগের মতো মাছ না থাকলেও আশা নিয়ে জমানো অর্থের সাথে ঋণের টাকায় প্রস্তুত করেছেন নৌকা, জাল।
এরইমধ্যে নদীর পাড়ের দোকান থেকে কেনা হয়েছে নৌকার দরকারি জ্বালানি আর শুকনো খাবার। সন্ধ্যা ৭টা বাজে নৌকায় উঠে সেরে নেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আঁধারের বুক চিরে রওনা হন মেঘনার মাঝখানে। জোয়ার ভাটার হিসেব কষে রাতে মেঘনার বুকে ছড়াতে থাকে জাল। তারপর অপেক্ষার পালা।
জালের ভাজ ঠিক রাখতে নৌকার ইঞ্জিন চালু রেখে শক্ত হাতে বৈঠা ধরে বসে থাকেন মাঝি। এসময় কেউ আবার মোবাইলে চোখ রেখে খুঁজছেন কিছু একটা। কেউ খেয়ে নিচ্ছেন সঙ্গে করে নিয়ে আসা শুকনো খাবার।
এবার জাল টেনে মাছ শিকারের পালা। জাল টেনে ঘাটে ফিরতে ফিরতে রাত ৩টা বাজে। ভোরের আলো ফুটতেই রাতে ধরা মাছ নিয়ে হাজির হন নদীপাড়ের আড়তে। এসময় মাছ বেশি পাওয়ার খুশি নিমিষেই মিলিয়ে যায় লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে গিয়ে। মাছ বেচার একটা ভালো অংশ চলে যায় জ্বালানি খরচ বাবদ।
নদীতে মাছ ধরে সংসার না চলায় অনেক জেলে ঢুকছেন ভিন্ন পেশায়। তাদেরই একজন পুরানবাজারের মনির হোসেন। পুরোনো পেশা ছেড়ে গত ৩ বছর আগে বেছে নিয়েছেন রিকশা চালানোর কাজ।
মনিরের মত অনেকেই ছেড়েছেন জেলে পেশা। মাছ না পাওয়ায় ভরা মৌসুমেও চায়ের দোকানে বসে অলস সময় কাটে অনেক জেলের।
লোকসানে পুঁজি হারিয়ে অনেক মালিক তুলে নিয়েছেন জাল নৌকা। মৎস্যজীবী নেতারা বলছেন, গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ জেলে ছেড়ে দিয়েছে এই পেশা।
তবে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। ইলিশের দাম বেশি পেতে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা নদীতে মাছ সংকটের কথা তুলেন। ইলিশ উৎপাদনে গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
আর মৎস্য বিভাগের এমন মন্তব্যের বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৎস্য বিভাগ কোথা থেকে কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তা তাদের জানা নেই।
সরকারি হিসেবে চাঁদপুরে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও জেলে ও মৎস্যজীবীদের দাবি তার প্রতিফলন যেন বাস্তবে দেখতে পাওয়া যায়।