রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তৃতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ (শনিবার, ৫ অক্টোবর) প্রথম দিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস। বৈঠকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৬ (ছয়) সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক শুরু হয়। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামী ৮ তারিখ এই সরকারের দুই মাস হবে। এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা তাদের দোসর হয়ে কাজ করেছে, লুট পাট, গুম-খুনের সাথে জড়িত ছিল তারা এখনো স্ব জায়গায় বহাল রয়েছে। এদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যে জেলা প্রশাসকের ব্যাপারে ৫৯ জন কী করে নিয়োগ করা হলো সেটা জানতে চেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল করার জন্য অনুরোধ করেছি। আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের কথাও জানিয়েছি উপদেষ্টাকে।’
১৫ বছরে যাদের পদোন্নতি হয়নি সে ব্যাপারে নজর দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগের ব্যাপারে পরিস্কারভাবে বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখানকার বেশিরভাগ নিয়োগ ছিল দলীয়ভাবে। এখনো ৩০ জনের মতো বিচারক কাজ করছে সেখানে। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সুনির্দিষ্ট মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের দেখতে পাচ্ছি জামিন দেয়া হচ্ছে, যেটা খুবই উদ্বেগজনক বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মামলাগুলোকে প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে কার সহায়তায় পালিয়ে যাচ্ছে সেভাবে নজর দিতে বলেছি।’
ভারতে থেকে শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে যেভাবে ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে, অপপ্রচার চলছে, এই বিষয়টাকে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছি। শেখ হাসিনা যাতে ভারতে বসে যাতে অপপ্রচার করতে না পারে সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গুম-খুনের সাথে যারা জড়িত তারা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। শুধু জিয়াউল হক ছাড়া কেউ আটক নেই। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে কথা বলেছি।’
জাতিসংঘের একটি দল এসেছে এখানে তাদের সাথে বিভিন্ন ডির্পাটমেন্টের যারা জড়িত আছে তারা এই দলকে তেমন সহযোগিতা করছে না বলেও জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে লক্ষ্য করে সনাতনী ধর্মের কিছু মানুষ অপপ্রচার করে এদেশের মানুষকে উষ্কে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষ হলে প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনার জন্য যমুনায় প্রবেশ করেন ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল।
এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদেরও আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ইতিমধ্যে দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সভা হয়েছে।
সবশেষ গত ৩১ আগষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন ড. ইউনূস। তারই চলমান প্রক্রিয়ায় শনিবার থেকে আবারও নতুন দফায় আলোচনা শুরু হবে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে।