ভারতের সাথে বন্ধুত্বের বাহন বন্ধন, মৈত্রী ও মিতালি এক্সপ্রেস। প্রতিবেশির আমন্ত্রণ, জরুরি সেবা কিংবা বাণিজ্য। বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীদের জন্য ছিল যাতায়াতের সহজ মাধ্যম।
মধ্য জুলাইয়ে যখন টালমাটাল দেশ, তখন বন্ধ হয়ে যায় দু'দেশের মধ্যে সব ধরনের ট্রেন চলাচল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রেল যোগাযোগ স্বাভবিক হলেও আটকে যায় আন্তঃদেশিয় ট্রেন চলাচল।
অগ্রিম টিকিটের যাত্রীরা এরইমধ্যে যাত্রা বাতিল করছেন। তবে টিকিট বিক্রি না হলেও আগাম টিকিটের টাকা ফেরত দিতে কমলাপুরে খোলা রয়েছে কাউন্টার।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারি সুব্রত হাওলাদার বলেন, 'মৈত্রী, মিতালি দু'টি ট্রেনই বন্ধ আছে। কোনোটাই চলাচল করছে না। অগ্রিম টিকিট যাদের নেয়া ছিল, সেগুলো ফেরত আসলে আমরা ফেরত নিচ্ছি।'
শহরতলি স্টেশনের পাশে গ্যারেজে দেখা মিললো মিতালি এক্সপ্রেসের। দীর্ঘ সময়ের বসে থাকায় যাত্রীদের জায়গা দখলে নিয়েছে মাকড়সা।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গ্যারেজে রাখা হয়েছে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ছবি: এখন টিভি
যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে সপ্তাহে কয়েকবার। যাত্রী নিয়ে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যায়। তবে গত দু'মাসের বেশি সময় ধরে এটি যাত্রী পরিবহন তো করছেই না। বরং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার যে গ্যারেজ রয়েছে, সেখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। তাতে জরুরি প্রয়োজন বা চিকিৎসাসেবায় যারা বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াত করেন তারা যেমন পড়েছেন বিপাকে, তেমনি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়েরও। যাত্রীদের জিজ্ঞাসা কবে চালু হবে বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল।
ঢাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'আন্তঃনগর মিতালি, এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো চলাচল বন্ধ হয়েছে অন্যান্য সব ট্রেনের সাথে। এরপর যখন আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়, তখন ভারতের সাথে আমাদের যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সেটা এখনও চালু হয়নি। ভারতে চিঠি লেখা হয়েছে। আবর যখন ট্রেন চলাচল শুরু হবে আমরা সকল যাত্রীদের সেটা অবগত করবো। প্রতিদিনই অনেক যাত্রী আসছে, তারা কাউন্টারে এসে ফেরত যাচ্ছেন। কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। বাংলাদেশ রেলের পক্ষ থেকে ভারতে জানানো হয়েছে যে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।'
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানালেন, বাংলাদেশের পক্ষ দুই দেশের রেল চলাচলে কোন বাধা নেই। ভারতের সিদ্ধান্ত জানানোর অপেক্ষায় আটকে আছে চলাচল।
সরদার সাহাদাত আলী বলেন, 'যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলটা এখন আপাতত বন্ধ আছে। এটি কীভাবে কী হবে না হবে এ ধরনের একটা বিষয় আমাদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। তারা আবার আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরপর ভারত থেকে কোনো অগ্রগতি আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আমরা আর কিছু জানিও না।'
কয়েক মাসে আগে তুমুল আলোচনায় থাকা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল চলাচল বা ট্রানজিট সুবিধার বিষয়েও কথা বলেন রেলওয়ের এই শীর্ষ কর্তা।
সরদার সাহাদাত আলী বলেন, 'এই বিষয়েও পরবর্তীতে কোনো অগ্রগতি ভারতীয় কোনো মাধ্যম থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে নেই।'
রেলওয়ের সূত্র বলছে, আন্তঃদেশিয় ট্রেন চলাচলের বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষক দল শিগগিরই আসতে পারে বাংলাদেশ সফরে।