জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছানামুখীকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথম উদ্যোগ নেন। এজন্য ডিপিডিটি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান তিনি।
ওই চিঠিতে ছানামুখীর বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা এবং উৎপাদন পদ্ধতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করার বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। যার জিআই নম্বর ৪১।
মূলত কোনো দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- সেক্ষেত্রে ওই পণ্যটিকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ছানামুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টি। এটিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘদিন দরে চেষ্টা চলছিল। এটিকে জেলার ব্র্যান্ডবুকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি অতিথিদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগমনে ছানামুখী দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। সম্প্রতি ছানামুখীকি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছানামুখী তৈরি হচ্ছে। যা দেশের আর কোথাও পাওয়া যায়না। চতুর্ভুজ আকৃতির ছোট এই মিষ্টির ওপরের অংশে থাকে চিনি আর ভেতরে দুধের ছানা।
শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি সম্পূর্ণ ছানা দিয়ে তৈরি বলে এটির নামকরণ করা হয় ছানামুখী। বর্তমানে প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম ৭০০ টাকা। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি জেলাবাসী। পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত মিষ্টি কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আদর্শ মাতৃভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী দুলাল মোদক বলেন, ‘এক কেজি ছানামুখী তৈরিতে ৫-৭ লিটার দুধ প্রয়োজন হয়। ছানামুখী তৈরির জন্য প্রথমে গাভীর দুধ জ্বাল দিতে হয়। এরপর গরম দুধ ঠান্ডা করে ছানায় রূপান্তর করে তৈরি হয় সুস্বাদু ছানামুখী। অত্যন্তহ যত্ন নিয়ে এই বিশেষ মিষ্টি তৈরি করা হয়। যার ফলে এটির দামও অন্যসব মিষ্টির চেয়ে বেশি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ছানামুখী জেলার একটি ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। অবশেষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’