দেশে এখন
0

আন্দোলনে সফলতা এলেও ক্ষত নিয়েই স্বপ্ন আঁকছে তরুণরা

কুমিল্লায় ছাত্র আন্দোলনে আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক বলে দাবি করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। রক্তঝরা পথে একদফার আন্দোলনে সফলতা এলেও দগদগে ক্ষত নিয়েই আগামীর স্বপ্ন আঁকছে তরুণরা। হতাহতদের তথ্যসংগ্রহ করে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পাশে দাঁড়াবে সরকার এবং সমাজের বিত্তবানরা এমনটাই দাবি স্বজন ও শিক্ষার্থীদের।

হয়তো মৃত্যু অথবা আহত হওয়ার শঙ্কা আছে, তারপরও কুমিল্লায় রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা। ৫ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রদের মিছিলে গুলিতে আহত হন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম। মুমূর্ষু সিয়ামকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের পর সিয়াম এখন শঙ্কামুক্ত। তবে নানা জটিলতা নিয়েই তার চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি জানান, অন্যান্য হাসপাতালের মতো এই হাসপাতালেও ৪০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

কুমিল্লা ট্রমা হসপিটালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সাইফুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, 'অলরেডি ৬০ জনের মতো রোগী ছিল আমাদের এখান, এতো বেশি ক্যাপাসিটি ছিল না। আমরা যত টুক সম্ভব ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট করে যার যেখানে রেফার করা প্রয়োজন তাকে সেখানে রেফার করেছি, আর কিছু রোগী আমাদের এখানেই ভর্তি করিয়েছিলাম।'

কাজের কথা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সিয়াম। এরপর মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত দরিদ্র কৃষক বাবার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তার টানাপোড়েনের সংসারে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা।

সিয়ামের মা বলেন, 'ডাক্তাররা বলছে যে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লাগবে। এখনও ওর অপারেশন বাকি আছে। আমার ছেলেটার জন্য আপনারা একটু সাহায্য করেন।'

ছাত্রদের মিছিলে যোগ দিতে একই দিন ব্রাহ্মণপাড়ার গোপালনগর থেকে দেবিদ্বারে আসেন সপ্তম শ্রেণির আরেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কামরুল হাসান। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত কামরুল ভর্তি হন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

কামরুলের মা বলেন, 'কামরুলের বাবা নেই। আমি অনেক কষ্ট করে ওরে বড় করছি যেটা বলে শেষ করা যাবে না।'

তবে, গুলিতে আহত হলেও তাতে মোটেও বিচলিত নন কামরুল হাসান। এ কিশোর শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেন সমৃদ্ধির দেশ গড়বে ছাত্র-জনতা।

কামরুল হাসান বলেন, 'নতুন সরকারের কাছে আমি চাই, বাংলাদেশ ভালোভাবে চলুক, মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন কুমিল্লার ছাত্র-জনতা। কখনও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মহাসড়ক অবরোধ আবার কখনও দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তপ্ত ছিল রাজপথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে শুধু কুমিল্লাতেই আহত হয়েছে অন্তত সহস্রাধিক মানুষ। এমন দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা জানান, এখনও অনেক শিক্ষার্থী বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু রায়হান বলেন, 'প্রথমে ১১ তারিখ সামান্য কিছু আহত ছিল, তখন আমরা নিজেরা ফান্ড করে তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা চালিয়েছি।'

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. সাকিব হোসেন বলেন, '৭০ হাজার বা ৮০ হাজার টাকা দরকার, কিন্তু আমার কাছে আছে ১০ হাজার টাকা। এর জন্য আমাদের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালগুলোতে বিল বাকি হয়েছে। বিভিন্ন ফার্মেসিতে আমাদের বিল বাকি হয়েছে। এখন আমাদের কাছে যে সহযোগিতা আসছে তা খুবই অপ্রতুল।'

আন্দোলনের শুরু থেকে আহতরা বেশিরভাগই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কেবলমাত্র এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২২ জন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, 'আমাদের চিকিৎসকের বাইরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সিং কর্মকর্তা ও অন্যান্য সেবাকর্মীদের আমরা সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রাখি। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতিতে সম্মিলিতভাবে যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করেছি। এবং সকলের সহযোগিতা পেয়েছি।'

মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করে রাজপথে দ্রোহের মিছিলে শামিল হন ছাত্র-জনতা। মৃত আর আহতের মিছিলও দীর্ঘ হয়। আহতদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

এসএস