অর্থনীতি
দেশে এখন
1

আবারো বেদখলে চট্টগ্রাম বন্দরের ৭৮ একর জায়গা

চট্টগ্রাম

সরকার পরিবর্তনের সুযোগে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ৭৮ একর জায়গা ফের বেদখল হয়েছে। লালদিয়ার চরের সে জায়গায় চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনাল করার চুক্তিও করেছে এক বিদেশি কোম্পানির সাথে। উচ্ছেদের সময় ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অজুহাতে সে জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে স্থানীয়রা। বসতি স্থাপনকারীদের দাবি ৪ বছর আগে নদী রক্ষার নামে ভয় দেখিয়ে নির্মমভাবে তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। যদিও বন্দরের দাবি, দখলদারদের দাবির কোনো ভিত্তি নেই।

৫২ বছর আগে, ১৯৭২ সালে বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির জন্য নিজেদের ভিটামাটি দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গার স্থানীয় ১২৪ পরিবার। তখন কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে গিয়ে তারা বসতি গড়েন।

যদিও জায়গাটি নিজেদের দাবি করে দুটি ব্লক ২০০৫ সালে এবং ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী সি ব্লকের ১৪০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে ২০২১ সালে ৭৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর।

সর্বশেষ ডেনমার্কের শীর্ষ শিপিং ও লজিস্টিক কোম্পানি মার্স্কের এপি মুলারের বিনিয়োগে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে প্রকল্প নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থায় পুনরায় ললালদিয়ার চর বেদখল হওয়ায় কর্নফুলী নদীর মোহনায় সম্ভাবনাময় এই টার্মিনাল নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকার পতনের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ৬ আগস্টে সেখানে প্রবেশ করে কাঁচা ঘর নির্মাণ শুরু করে উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, উচ্ছেদের আগে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের হামিদ চরে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এজন্য জমির দলিল গ্রহণ ও বাসিন্দাদের তালিকা করা হয়।

অথচ ভয় দেখিয়ে নদী রক্ষার নামে, হাইকোর্টের এক রায়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ২০২১ সালে তাদের অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরপর থেকে ১৪০০ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই মধ্যে শোকে দুঃখে অনেকে রোগে ভুগে মারা গেছেন।

লালদিয়ার চর পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার বাপ-দাদারা ভিটামাটি দিয়ে চলে আসছে। বিমানবাহিনীর ঘাটির জন্য, সংস্কারের জন্যে স্বাধীনতার পরে। আজকেও সরকারের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য আমরা দিয়ে দিব। সরকারের তো জায়গার অভাব নেই। আমাদের জায়গাটা দিয়ে দিবে, আমাদের বাসস্থান করে দিবে। আমাদের মৌলিক অধিকারটা দিবে।’

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার পতনের পর নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে তারা লালদিয়ার চরে ফিরে এসেছেন।যেখানেই হোক চান, এক টুকরো মাথা গোঁজার ঠাঁই। পুনর্বাসন না করলে লালদিয়া থেকে এক পাও নড়বেন না বলে ঘোষণা দেন তারা ।

সরেজমিনে দেখা যায় লালদিয়ার চরে বন্দরের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে চলছে কাচা ঘর নির্মাণের কাজ। গেইটে আনসার থাকলেও বাধাহীনভাবে চলছে কাজ। এই বিষয়ে বন্দর সচিব বলেন, বেআইনিভাবে লোকজন সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তাদের যৌক্তিক দাবি থাকলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘তাদের যদি কোনো লিগ্যাল ক্লেইম থাকে আইনগতভাবে তারা সেটি নিয়ে প্রসিড করতে পারে। আমরাও সেটা আইনগতভাবে মোকাবেলা করব। আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকলে অবৈধভাবে দখল করার সুযোগ নেই।’

২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর লালদিয়ায় প্রথম বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণেরর প্রকল্প নিলেও তা বেশিদূর এগোয়নি। পরে ২০১৪ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জমি উদ্ধারসহ নানা জটিলতায় তা নিভে যায় একসময়।

সর্বশেষ এই স্থানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি মার্সকের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলেও আবারো জটিলতায় মুখে পড়লো প্রকল্পটি।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর