গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বানের পানি প্রথম আঘাত হানে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে। তীব্র স্রোতে প্রথম যাদের বাড়ি ভেসে গিয়েছিল তাদের একজন গৃহবধূ নয়নমনি। সব হারিয়ে তাদের পুরো পরিবারের আশ্রয় এখন বাধেঁর উপর খোলা আকাশের নিচে। তাদের মতো এই অবস্থা আশপাশের তিন গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের।
নদী ভাঙনে ঘরহারা নয়নমনি বলেন, ‘এক ধাক্কায় পানি স্রোতে আমাদের সব ঘর নিয়ে গিয়েছে এখন বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছি পুরো পরিবার।’
২১ আগষ্ট রাতে নদী ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার। কবলিত হয় সদর ও দেবিদ্বার উপজেলার বেশি কিছু গ্রাম। আর উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয় চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জসহ ১০টি উপজেলা। ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসল, মাছের খামারে ক্ষতির পাশাপশি জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৯ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একজন বলেস, ‘হঠাৎ পানি চলে আশায় কেউ কিছু আনতে পারে নাই।’ আরেকজন বলেন, ‘ঘেরের মাছ সব ভেসে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। মানুষ এখন খুবই অসহায়।’
ভয়াবহ বন্যায় জেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৬শ' কোটি টাকা। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী কয়েক মৌসুম নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।’
কুমিল্লার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, 'বন্যার পর মাছের রোগ বালাই বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।'
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ঘরবাড়ি ও ১০০ কিলোমিটার সড়ক। দেবে গেছে অনেক ব্রিজ ও কালভার্ট। সব মিলিয়ে জেলায় বন্যার ক্ষতি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
কুমিল্লার ১৯৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২৫টিই বন্যা আক্রান্ত হয়। এসময় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন ৯৩ হাজারের বেশি মানুষ।