হিন্দু পুরান মতে, প্রায় পাঁচ হাজার ২৫০ বছর আগে যেদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় তখন ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম তিথি। অশুভ দমন করতে তার সেই আবির্ভাবের দিনটি ঘিরেই সনাতনী ধর্মে বিশ্বাসীদের এই উৎসব।
এই মিছিলের সম্মুখ সারিতে শিশু কৃষ্ণদের উপস্থিতি তো ছিলোই, ছিল রাধা-কৃষ্ণের প্রতিরূপও। ঢাক ঢোল, উলুধ্বনি আর কৃষ্ণ নামের শ্লোগানের বাধ ভাঙা এই উৎসব উদযাপন করেছেন যে যেভাবে পেরেছেন, সেভাবেই।
রাজধানীর পলাশী মোড় থেকে শুরু হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের এই ঐতিহাসিক র্যালী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে যা শেষ হয় বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে। আয়োজকরা বলেন, বন্যার্তদের প্রতি সহমর্মী হয়ে এবারের আয়োজন তারা সংক্ষিপ্ত করেছেন।
একজন সনতন ধর্মাবলম্বী বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেন দেশ ও দশের মঙ্গল করেন। কোনো সাম্প্রদায়িক পরাশক্তি যেন বাংলাদেশে এসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে না পারে। আমরা এই বাংলাদেশে সম্প্রীতি বজায় রেকে হিন্দু মুসলিম একসাথে বসবাস করতে চাই।'
পলাশী মোড়ে এই র্যালীর উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সেখানে প্রধান অতিথি আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, তারা সংবিধান অনুসারে সকল ধর্মের মানুষের জন্য যৌক্তিক অধিকার নিশ্চিত করতে চান। এদিন মতিঝিলের শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ন জিউ মন্দিরে জন্মাষ্টমীর আয়োজনে যোগ দেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, 'আজকের জন্মাষ্টমীর ব্যায় কিছুটা সংকুচিত করে আপনারা এই অর্থ বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছিয়েছেন। এজন্য আমি আপনাদের আন্তরিকবাবে ধন্যবাদ জানাই। এই যে ধর্মীয় বিভাজন অর্থাৎ বিভিন্নজন বিভিন্ন ধর্মের এটাই একটা সুন্দর সমাজের বহির্প্রকাশ।'
ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা জানি গত ৫৩ বছরেও বিভিন্ন সময় ন্যাককরাজনকভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন হয়েছে। এগুলোর কোনো ধরনের বিচার কিন্তু করা হয়নি। যারা বিচার করবে তারাই এই ঘটনাগুলোর সাথে জড়ি ছিল।'
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, 'আমরা এমন এক বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। সবার সমান অধিকার থাকবে। এই রাষ্ট্রের মালিকানা সবার থাকবে। আমরা একটা পরিবারের মতো থাকবো। আমরা যে যার ধর্ম পালন করবো, অন্য ধর্ম্যকে আমরা সমানভাবে সম্মান করবো।'
একটা ভিন্ন, প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশে উদযাপন হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব জন্মাষ্টমী।