পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন
0

পানির নিচে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা; যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

৪ দিন পরেও পানির নিচে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সড়ক যোগাযোগ। এরইমধ্যে কিছু স্থানে পানি নামতে শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ। সারা দেশে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ফেনীর বেশিরভাগ এলাকা। এখনও পানির নিচে জেলা শহর। বন্যাকবলিত বেশিরভাগ এলাকায় বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ। টাওয়ার অকেজো হয়ে ব্যাহত হচ্ছে মোবাইলের সংযোগ সেবা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ফেনী অংশে ৩ দিন ধরে বন্ধ সড়ক ও রেল যোগাযোগ। সার্বিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় স্বজনদের খোঁজ পাচ্ছে না অনেকে। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

মুহুরী নদীর পানি কমায় চট্টগ্রামেও নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনো পানিবন্দি ফেনীর সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম অংশের বিভিন্ন গ্রাম। এরইমধ্যে জেলায় প্রাণ গেছে ৩ শিশুসহ অন্তত ৫ জনের। দেখা দিয়েছে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট।

অন্যদিকে, কুমিল্লায় এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি বইছে গোমতী নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নেই পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।

বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নোয়াখালীর বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করলেও এখনো পানির নিচে পুরো জেলা। তাই কাটেনি স্থানীয়দের আতঙ্ক। এখনো মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন জেলার অন্তত ২০ লাখ বাসিন্দা।

এরইমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছে বহু মানুষ। তবে রয়েছে খাবার ও ওষুধ সংকট। এমন অবস্থায় জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।

'বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে, ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানি নেমে গেলে দ্রুত বিদ্যুতের লাইন সচল করা হবে' বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

আরও বলেন, ১৬ বছরের দুর্নীতি তো আর আজকেই পরিবর্তন করা যাবে না, আমার হাতেতো জাদুর চেরাগ নাই।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ভারি বর্ষণে উচাখিলা-মরিচারচর সড়কের বটতলা এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন কয়েক গ্রামের মানুষ। চলাচল ও পণ্য পরিবহনে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী, রোগী পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। চরাঞ্চলের সবজি বাজারে নিতে পারছেন না কৃষকেরা। পানির তোরে ব্রিজ ভেঙে পড়ার সাথে সাথে দুইপাশের ফসলি জমিও বিলীন হয়ে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদে। সড়ক এবং পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে ভাঙনের হুমকিতে।

এদিকে গত বছর একই স্থানে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে গেলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়। দুদিন আগে সেটিও আবার ভেঙ্গে যায়। এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

বন্যার পানি সরে গেলেও আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কে বেইলি সেতু ভেঙে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক আসতে না পারায় চতুর্থদিনের মতো বন্ধ রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এছাড়া বন্ধ রয়েছে ভারতে যাত্রী পারাপার কার্যক্রমও।

মৌলভীবাজারে কমছে বন্যার পানি, মনু ও ধলাই নদীর কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দিয়ে এখনো ঢুকছে পানি, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, ফসল ও মাছের ক্ষতি হচ্ছে।উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতি বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের সবক'টি নদীর পানি এখন কমতে শুরু করেছে। পানিতে ডুবে ক্ষতি হয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। গবাদিপশু ও ফসল নিয়ে লোকজন আছেন দুশ্চিন্তায়। মনু ও ধলাই নদীর কয়েকটি স্থানের ভাঙ্গন দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল, প্লাবিত হচ্ছে। তবে বেশ কমেছে পানি।

মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি অবস্থায়, এসংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এপর্যন্ত প্রশাসন থেকে ৭০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও ৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৭ হাজার ১৪৫ জন লোক। প্রশাসনের পক্ষ ৫১৬ টন ত্রাণের চাল ও নগদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গবাদিপশু ও শিশু খাদ্যের কোনও ব্যবস্থা না করায় সেগুলো নিয়ে লোকজন পড়েছেন সমস্যায়। ত্রাণ না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বন্যার পানি উঠেছে পাসপোর্ট অফিস ও বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ও বিভিন্ন রাস্তায়। লোকজনকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

জেলায় ১ হাজার ৬শ' ৫০টি পুকুর ও দিঘীর ২১০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গিয়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা না গেলেও ৪৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির ধান ও ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মনু নদীর পানি কমে গিয়ে রেলওয়ে পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ও চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে ও জুড়ি নদীর পানি কমে গিয়ে ১৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় নদীর বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ উদ্যোগে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর