আড়াই বছরের সন্তানের ডাকে সাড়া দিলেও তাকে প্রাণ ভরে দেখার শক্তি নেই বাবা জুয়েল মণ্ডলের। পুলিশের ছররা গুলিতে বাঁ চোখ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ডান চোখে পৃথিবীর আলো ফিরবে কিনা সে শঙ্কায় গুণছেন দিনক্ষণ। সহধর্মিণী ফরিদাও এখন কান্নার সহযাত্রী।
অটোরিকশার চাকা ঘুরলেই জীবনের চাকা ঘুরে এ দম্পতির। তবে আগস্টের ৫ তারিখের পর থমকে আছে জীবনের আয়-রোজগার। চোখের আলো হারানোর সঙ্গে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাকি জীবন। অপরাধ একটাই- আওয়াজ তুলেছিলেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে।
সহধর্মিণী ফরিদা বলেন, ‘এখন গাড়ি (অটোরিকশা) চলছে না। চার্জও নেই। আগে যাও রোজগার হতো এখন তো বেকার হয়ে গেছে। ওনার নিজের চলাচলই এখন কষ্ট।’
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে আসাদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। যারা এখনও তীব্র যন্ত্রণা আর অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন।
এক শিক্ষার্থী জানান, তার বাম চোখে তিনটি গুলি লেগেছে। দুটি গুলি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। একটি গুলি এখনো চোখের ভেতরে আছে।
একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিদের এমন অবস্থায় এসব পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। নতুন সরকারের কাছে চেয়েছেন জীবিকার নিশ্চয়তা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতে আহত হয়েছেন এরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরে ও চোখে ছররা গুলি লাগে। কেউ কেউ দৃষ্টি হারিয়েছে চিরতরে। কেউবা হয়েছেন মারাত্মক জখম।
চোখে জখম বা আঘাতের বাইরেও অনেকে শরীরের অন্যান্য অংশেও আঘাত নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। যা সামাল দিতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘হঠাৎ করে একদিনে এত রোগী এসেছে যে আমরা সামলাতে হিমশিম খেয়েছি। ১১টা টেবিলে ২৪ ঘণ্টা আমাদের অপারেশন করতে হয়েছে। কারো দুই চোখ, কারো এক চোখ। চিকিৎসার পর অনেকের দৃষ্টিশক্তির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রেফার করা রোগীরা আসছেন বলে জানালেন হাসপাতালটির পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মোট ৭০৬ জন রোগী এসেছিলেন। এর মধ্যে ৫৭৯জনকে আমরা ভর্তি দিয়েছি। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আর ৪৮৭ জনের অপারেশন করা হয়েছে।’
দেশের ক্লান্তিলগ্নে অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে এসব যোদ্ধাদের প্রয়োজনে আরও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি পরিবারের।