দেশে এখন
0

ড. ইউনূসের জন্মভিটায় উৎসবের আমেজ, স্বাগত জানানোর অপেক্ষা

সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর উৎসবের আমেজ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মভিটা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে। খুশি ছড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামেও। জন্মভিটায় স্মৃতিচিহ্ন না থাকলেও সেখানকার পরিচিত, স্বজন, বন্ধু খেলার সাথীরা আজ দারুণ গর্বিত। আর যে জোবরা গ্রাম থেকে আজকের ড. ইউনূসের উত্থান, সেখানকার মানুষ আরেকবার নতুন পরিচয়ে তাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মভিটার চিহ্ন বলতে কেবল খালি এক টুকরো অংশ। এখানে একসময় ছোট্ট ঘর ছিল, যেখানে জন্ম নেয়া মানুষটি এখন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান।

দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পুরো চট্টগ্রামের আলোচনার কেন্দ্রে আছে ড. ইউনূস। নজুমিয়া হাটের বাথুয়া গ্রামের তার স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ভিড় করছেন একসময়ের সাথী কিংবা আত্মীয়রা। জানালেন বাল্যকাল থেকেই প্রগতিশীলতার চর্চায় বড় হন ইউনূস। নাটক-কবিতা, খেলাধুলাসহ নানান আয়োজনে মাতিয়ে রাখতেন সবাইকে।

স্থানীয় একজন প্রবীণ বলেন, 'মাঝে মাঝে এসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে পুকুরে সাঁতার কাটতো। আমাদের ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছে এটা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। আমাদের এলাকাবাসীও গর্ববোধ করে।'

তবে, বাথুয়া গ্রামে বেশিদিন থাকা হয়নি ড. ইউনূসের। প্রাথমিকের পাঠ শেষ হওয়ার আগেই পাড়ি জমান শহরে। কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে পাড়ি জমান বিদেশে।

কর্মজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক থাকা অবস্থাতেই মানুষের দারিদ্রতা ঘোচাবার শপথ নেন। প্রতিষ্ঠা করেন তেভাগা খামার। ১৯৭৬ সালে সেখানেই রচিত হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের পটভূমি। আজও সেই তেভাগা খামার রয়েছে। যে গ্রাম থেকে ড. ইউনূস আজ নোবেলজয়ী হিসেবে পরিচিত হাটহাজারীর সেই জোবরা গ্রামে এখন খুশির আমেজ।

স্থানীয় একজন বলেন, 'বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করার জন্য আমাদের ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দেয়ায় আমাদের জোবরাবাসীর পক্ষ থেকে রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ২০০৬ সালে যেদিন উনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, সেদিন আমি বিদেশ যাচ্ছিলাম। আমার পাসপোর্টে যখন জোবরা দেখেছে, তখন সবাইকে বলেছে দেখো এটা জোবরার মানুষ।'

এই গ্রামে ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানানোর বিভিন্ন বার্তা শোভা পাচ্ছে ব্যানারে। এখানেই ছুফিয়া খাতুনের বাড়ি। যিনি প্রথম ঋণগ্রহণ করেছেন। তিনি বেঁচে না থাকলেও কথা হয় তার বোন এবং নাতিদের সাথে। জানান, সেসময় ১০ টাকা দেয়ার মতো কেউ ছিলেন না, তখনই ড. ইউনূস তাদের পাশে দাঁড়ান ত্রাতা হিসেবে। তার দেখানো পথ ধরে ভাগ্য বদল হয় অনেক গ্রামবাসীর।

ছুফিয়া খাতুনের নাতি বলেন, 'তার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আমার নানী ব্যবসা করেছিল। নানীর পরিস্থিতি তখন খারাপ ছিল।'

চট্টগ্রামের প্রথম কোনো ব্যক্তি সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাই এখানকার মানুষের প্রত্যাশার পারদও বেড়েছে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'যার কথায় সারা পৃথিবীর মানুষ শান্তিতে থাকে, আমরা আশা করবো আমরাও শান্তিতে থাকবো। আশা করি, বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে তার নেতৃত্বে। ছাত্রদের তার ওপর আস্থা আছে বলেই তাকে বেছে নিয়েছে। আমরা একটা বিষয় জানি, সেটা হলো, আমার যদি যোগ্যতা না থাকে তাহলে ওনার কাছে কোনো স্বজনপ্রীতি নেই।'

এর আগে অনেকবার দেশে ও বিদেশে সমানভাবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাটহাজারী আসলেও, এবার আসবেন সরকারপ্রধান হিসাবে। এখন তাকে বরণের অপেক্ষায় শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিচিতজনরা।

tech