নিহত কামালের মেয়ে সুরাইয়া এখন টিভিকে বলেন, 'বাবার শুধু গরম লাগতো। গরম সহ্য করতে পারতো না বাবা। এখন বাবা কবরে কীভাবে গরম সহ্য করবে?'
এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে সুরাইয়াকে?
সুরাইয়া বলেন, 'গুলি খাওয়ার পর রক্তে পুরো জায়গা ভেসে গেছে। তরতাজা রক্ত সামনে পড়ে ছিল বটগাছের নিচে।'
এভাবেই এখন টিভিকে বাবার মৃত্যুর বর্ণনা দেন মাধ্যমিক স্কুলে পড়া মেয়েটি। গত ১৯ জুলাই ছিল সুরাইয়া ও তার পরিবারের জন্য আজন্ম বিভীষিকার দিন।
সুরাইয়া বলেন, 'বাবার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, দাঁতগুলো বের হয়ে গেছে। মৃত্যুর পর যখন পোস্ট-মোর্টেম করে তারপর দেখি বাবা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যদি কোনোদিন ভুল করে থাকি, বাবার কাছে শেষবারের মতো মাফও চাইতে পারলাম না।'
রিকশাচালক মৃত কামাল মিয়ার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মেয়ে হবে পুলিশ। অথচ সেই স্বপ্ন অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আটকে গেছে বাবার হঠাৎ বিদায়ে।
সাধ ও সাধ্যের বিস্তর ফারাক থাকলেও চার সন্তানের বটগাছ হয়ে ছিলেন কামাল মিয়া। অথচ সেই বটবৃক্ষ এখন প্রাণহীন। সন্তানদের কাছে বাবার মানিব্যাগ, জামাকাপড় আর শুকিয়ে যাওয়া রক্তমাখা জুতাটাই এখন স্মৃতি হয়ে আছে।
গৃহপরিচারিকা ফাতেমা উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে যেন দিশেহারা। চার সন্তানকে কীভাবে বড় করবেন সেই দুশ্চিন্তা যেন থমকে দিয়েছে তাকে।
ফাতেমা বলেন, 'আমি তো এখন একা হয়ে গেলাম। আমার পক্ষে চলা সম্ভব না। আমার তো কোনো থাকার জায়গা নেই, ঘরও নেই। আমি এখন কীভাবে চলবো জানি না। আর এখন যে আমার মেয়েরা আছে তাদের বিয়েশাদি বা কর্মস্থান দিয়ে দেবো।'
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কামাল ছিল খেটে-খাওয়া নির্ভেজাল মানুষের নাম।
স্থানীয় একজন বলেন, 'হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে আসার মতো টাকা-পয়সাও ছিল না। আমরা স্থানীয়রা টাকা-পয়সা উঠিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসি। তারপর তার লাশ নরসিংদীতে নিয়ে যাই। সেখানেই তার দাফন কাফন করি। কামাল খুব ভালো ছিল, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না তার।'
গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কামাল পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন শান্তিনগরে।