দেশে এখন
0

বগুড়ায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন পশুখাদ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা

বগুড়ায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে পশুখাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। যার অধিকাংশের নেই সরকারি অনুমোদন। আবার যে কয়টির অনুমোদন রয়েছে তার অনেক কারখানায় নেই ল্যাবরেটরি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং প্রশিক্ষিত জনবল।

দিন দিন গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা। তবে খামার করতে গিয়ে নিম্নমানের ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রিমিক্স খাবারে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ খামারিরা। ঘটছে উৎপাদন বিপর্যয়। মানহীন এসব কারখানা এখন বগুড়ার অলিগলিতে।

শহরতলী শাকপালা এলাকার একটি মার্কেটের পিছনে সেবা এন্টারপ্রাইজ নামের কারখানার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তৈরি হয় ভিটামিন, মিনারেল, ট্রেসএলিমেন্ট এবং অন্যান্য ফিড অ্যাডিটিভের জটিল মিশ্রণ। তবে এখানে নেই ল্যাব, প্রাণি-ডাক্তার। কোনো মতে প্যাকেটজাত করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। একই অবস্থা পাশের বেস্ট কেয়ার এগ্রো নামের অপর একটি কারখানায়। এখন টিভির ক্যামেরা দেখে এই কারখানার দরজা বন্ধ করে দেয় কর্মচারিরা।

গাবতলী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রামেশ্বরপুর। নকল ঔষধ তৈরি হচ্ছে এমন খবরে সরেজমিনে দেখা যায় সাইনবোর্ড ঝুলানো একটি বাড়ি। ভিতরে ঢুকতেই ক্যামেরা দেখে ছোটাছুটি করতে থাকে কর্মচারিরা। পরে ছবি নিতে নিষেধ করেই দরজা আটকে দেয়। লাইসেন্স থাকার দাবি করলেও এসব কারখানার মালিকদের কাছে মান নিয়ে সদুত্তর নেই।

এক কারখানা মালিক বলেন, 'এখানে ভিটামিন নিয়ে মিক্সচার করে প্যাকেটিং করা হয়। ভিটামিনগুলো আমরা ক্যামিকেলের দোকান থেকে সংগ্রহ করি। আমাদের প্রোডাক্টের গুণগতমান টেস্ট ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষা করতে হয়।'

জেলাতে মান নিয়ন্ত্রণ করে হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা প্রিমিক্স প্রাণিখাদ্য তৈরি করলেও মানহীন, ভেজাল কারখানার দৌরাত্ম্যে অসহায় তারা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ৬০ ভাগ কমিশনে বাজারে তাদের পণ্য ছাড়ছে।

বগুড়া নোভা ফার্মার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'অসাধু ব্যবসায়ীদের ফলে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।'

জেলাতে তিন শতাধিক প্রিমিক্স কারখানা উৎপাদন চালাচ্ছে উল্লেখ করে পোল্ট্রি এবং গবাদিপশু মালিক সমিতির নেতারা জানান, ভেজাল খাদ্যে তারা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কারখানা তদারকিতে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

খামারিদের দেখভাল এবং পরামর্শও দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন জেলা দুগ্ধ খামার মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল আবেদীন।

তিনি বলেন, 'বগুড়ায় ৩০০ এর অধিক কারখানা আছে। যারা প্রতিনিয়ত ওষুধ মার্কেটিং করে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মনিটরিং করেন না।'

গত বছর থেকে কারখানাগুলোর উৎপাদিত পণ্যের ১০ ভাগের মান নিয়ন্ত্রণ হলে অনুমতিপত্রের পুনঃনবায়ন করা যাবে এমন পরিপত্র জারি হয়েছে। তবে মানহীন প্রতিষ্ঠানের চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনার কথা জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান।

তিনি বলেন, 'প্রত্যেকটা কোম্পানিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনবো। যথাযোগ্য মান বজায় রেখে তাদের ব্যবসা করতে হবে। যারা কোয়ালিটি ছাড়া ব্যবসা করবে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।'

গো খাদ্য এবং পোল্ট্রি খাবারের যে প্রিমিক্স কারখানাগুলো রয়েছে, এর নবায়ন করতে গেলে ১০ ভাগ খাবার ও প্রোডাক্ট ল্যাব টেস্টের আওতায় আনতে হয়। তবে বাকি প্রোডাক্টগুলো কিভাবে বাজারে ছাড়া হচ্ছে এর কোনো নির্দেশনা নেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের। তবে ল্যাব টেস্ট করে বাজারে সরবরাহের দাবি খামার মালিকদের।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর