কোরবানির ঈদ মানেই গরুর হাট, কৃষক - খামারিদের অন্যরকম ব্যস্ততা। দীর্ঘদিন লালন-পালনে প্রস্তুত করার পর গরু বিক্রির তোড়জোড়।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার শিমরাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান। এবারের ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন ৮শ’ কেজির বেশি ওজনের শাহীওয়াল জাতের গরু লাল বাবু। প্রায় তিনবছর ধরে লালন-পালন করেছেন পরম মমতায়। খাবারে খরচে হয় দিনে প্রায় হাজার টাকা। লাল বাবুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। গরুটি দেখতে হান্নানের বাড়িতে প্রতিদিন আসেন অনেক ক্রেতা-দর্শনার্থী।
তিনি বলেন, 'ভূট্টা, গমের ভুসি ইত্যাদি খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এতে দৈনিক হাজার টাকার মতো খরচ করতে হচ্ছে।'
নিজেদের সর্বস্ব আর ধারদেনা করে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে একটি-দুটি গরু পালন করেন অনেক প্রান্তিক কৃষক। সারা বছরের খোরাক জোগাড় হয় এই গরু থেকেই। সেই আশায় এবারও একটি গরু প্রস্তুত করেছেন সদর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের আশরাফ উদ্দিন। গরুর ভালো দাম পেলে হাসি ফুটবে তার মতো অনেক প্রান্তিক মানুষের মুখে।
খাবারের দাম অনেক বেশি। আমরা যারা প্রান্তিক খামারি আছি তাদের জন্য খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর ঈদ ছাড়া তেমন প্রফিট করা যায় না।
ছোট ছোট খামারে প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ৫ থেকে ১০টি করে গরু মোটাতাজা করেন অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। প্রতিবছরই কিছু না কিছু লাভের মুখও দেখেন তারা। তবে ভারতীয় গরু না আসলে বাজার ভালো থাকে, লাভও হয় বেশি। বড় বড় খামারের গরু অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায় অনেকটা আগেভাগেই। ভালুকার এরকম একটি বড় গরুর খামার উসামা এগ্রো। ছোট, মাজারি ও বড় আকারের দেশিয় উন্নতজাতের গরু রয়েছে এখানে। ৮-৯'শ কেজি ওজনের বড় গরুগুলো শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও ভারতীয় গির জাতের। এখানকার ৮০ ভাগের বেশি গরু ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। দামও পেয়েছেন বেশি।
উসামা এগ্রোর মালিক বলেন, 'আমরা প্রায় দেড়শো’র মতো গরু পালন করেছি। আমাদের প্রায় ৮০ ভাগের মতো গরু বিক্রি হয়ে গেছে।'
এদিকে ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় জমে উঠেছে কোরবারির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে এখন মুখর এই অঞ্চলের প্রতিটি পশুরহাট। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। এখানকার দেশীয় ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। কোরবানির জন্য স্থানীয়রা যেমন গরু কিনছেন তেমনি পাইকাররাও গরু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে গরুর দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
একজন খামারি বলেন, 'আমার খামারে গরু আছে ২৮টি। তেমন কাঙ্খিত দাম পাচ্ছি না। গোখাদ্যের দাম বেশি। গতবার যে ভুসি কিনতাম ১৬শ’ টাকা দিয়ে সেই ভুমি এবার কিনতে হচ্ছে ২১শ’ টাকায়।'
বিক্রেতাদের একজন বলেন, 'বাজার কম এখন। আমরা তো ব্যবসা করি। প্রতি গরু প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান যাচ্ছে।'
ক্রেতাদের একজন বলেন, 'গতবারের চেয়ে এবার দাম বেশি। দেখতেছি গুরু যদি দাম কম পায় তাহলে কিনবো এবার।'
ময়মনসিংহ বিভাগে এবার চাহিদার চেয়ে প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যা অন্য এলাকার চাহিদা পূরণ করবে। প্রায় এক হাজারের বেশি বাণিজ্যিক খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে কোরবানির গরু। যার বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মনোরঞ্জন ধর বলেন, 'আমাদের এখানে গরুর চাহিদা অনুমান করে ৩ লাখ ৯৪ হাজারের মতো। এতে আমাদের জেলার চাহিদা মিটিয়ে গরু অন্য জেলায় দেয়া হবে।'
ময়মনসিংহ অঞ্চলে এবার বসেছে চার শতাধিক পশুরহাট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র ও সড়ক- মহাসড়কে হাট না বসানোসহ বেশিকিছু নির্দেশনা দিয়ে এসব হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাতটি অস্থায়ী হাটের মধ্যে দুটি হাটের দরপত্র জমা না পড়ায় খাস কালেকশানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, 'যারা হাট ইজারা নিবেন তাদের হাটের নিয়ম দেয়া থাকে যে তারা হাট পরিষ্কার করে রাখবে। হাটে আসা- যাওয়ার জন্য দুটি পৃথক রাস্তা থাকতে হবে।'
এদিকে কোরবানির পশু পরিবহন ও পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। পশুবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি ও জোর করে এক হাটের পশু অন্য হাটে নামিয়ে নিলেই কঠোর ব্যবস্থা, জানালেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আবিদ হোসেন।
তিনি বলেন, 'যেসমস্ত পশুর হাটগুলো হবে যেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কোনো প্রকার জাল নোট হাটে না থাকে সেদিকে আমরা সর্তক আছি।'
ময়মনসিংহ বিভাগের চারজেলায় এবার ৪১৯টি কোরাবানির পশুর হাট বসবে। স্থায়ী হাট ১৯৪ এবং অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ২২৫। এরমধ্যে গুরুত্বর্পূণ হাট রয়েছে ১০২টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিম থাকবে ১১৯টি পশুরহাটে।