কারফিউ জারির প্রথমদিন শনিবার (২০ জুলাই) সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। প্রথমেই হামলা হয় টঙ্গী পশ্চিম ও গাছা থানায়। এরপর একে একে ট্রাফিক পুলিশ বক্স, টঙ্গী শিল্প পুলিশের ব্যারাক, ডেসকো, সিটি করপোরেশন, বেক্সিমকো ফার্মা ও বিআরটি প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন স্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
দুর্বৃত্তরা ডেসকোর কন্ট্রোল সেন্টার, কমপ্লেইন সেন্টার, সেবাকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, লোকাল স্টোরসহ অন্যান্য ইয়ার্ডের মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ডেসকোর গ্যারেজের ভেতর থেকে ১২টি মোটরসাইকেল ও ১টি সার্ভিস ট্রাক ভাঙচুর করে মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ডেসকোর আহত একজন কর্মচারী বলেন, 'আটজন ঢুকে আমাকে ঠেলছে বের করে দেয়ার জন্য। কিন্তু আমি কোনোভাবেই সরে যাাচ্ছিলাম না। তখন ওরা বলছিল যে আপনি এখন থেকে বের হন, আমরা এখানে আগুন দেবো। আমাদের এখানে নিচের দিকে যা ছিল, তার সবই নিয়ে গেছে।'
ঘটনার পর প্রায় ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল টঙ্গীর বেশ কয়েকটি এলাকা। দুর্বৃত্তদের হামলার ডেসকোর প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ৩৩/১১ কেবির সাবস্টেশন এবং এর পাশে আমাদের যে অফিস আছে সেটি তছনছ করে ফেলছে তারা। আমাদের সাবস্টেশনের নিচে রাখা ১২টি মোটরসাইকেল তারা পুড়ে দিছে।'
ঘটনার পাঁচদিন পরও সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে পোড়া গন্ধ মিলছে। সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, আগুনে প্রাইভেটকার, ফগার মেশিন, বর্জ্য অপসারণের ট্রাক, পে-লোডার, মিনি এস্কাভেটরসহ ১৯টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় নগর কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'যত ধরনের কাগজ ছিল, সেগুলো সব নাশকতাকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে চাই করে দিয়েছে।'
এছাড়াও নাশকতাকারীরা বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের বিভিন্ন স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে ৩১টি এস্কেলেটরসহ বিভিন্ন স্টেশনে রাখা মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, নাশকতায় অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'অধিকাংশ জায়গায় আমাদের এস্কেলেটর নষ্ট হয়েছে। মোট ৩১টি এস্কেলেটর নষ্ট হয়েছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।'
এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। নাশকতাকারীদের ধরতে ইতোমধ্যে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।