রোববার পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর কর্মসূচিতে লাঠিচার্জের পর থেকেই শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। পুরো কর্মজীবনে বেতন না পাওয়া শিক্ষাগুরুরা খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে নিজের আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অধিকার আদায়ের লড়াই করে চলেছেন।
৩৭ বছর প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করিয়েছেন। অথচ কোনো বেতন পাননি। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি কারও কারও জীবিকার মাধ্যম হয়েছে ভ্যান চালানো কিংবা কৃষিকাজও।
একজন শিক্ষক বলেন, 'এগুলো বলতে আমাদের লজ্জা লাগে, ইবতেদায়ি শিক্ষকরা ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ক্লাস করার পর বাকি সময়টা কেউ রিকশা চালায়, কেউ ঠেলাগাড়ি চালায়, কেউ ভ্যানগাড়ি চালায়।'
অন্য একজন শিক্ষক বলে, 'সকালে কৃষিকাজ করে মাদ্রাসার ক্লাস নিয়ে আবার বিকেলে মাঠে কাজ করছি। কাজ করে অল্প টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চালাইছি। আমাদের শোচনীয় অবস্থা।'
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই শিক্ষকরা এখন আর কোনো আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চান না।
একজন শিক্ষক বলেন, 'এই সামনের বাজেটে দিচ্ছি। এখন বাজেট কম আছে, এরকম আশ্বাস দিয়ে দিয়ে রেখেছে আমাদের। যদি আগেই একেবারে না বলে দিত যে, তোমাদের জাতীয়করণ করা হবে না, তোমরা মিথ্যা স্বপ্ন দেখো না, আশায় থেকো না, তাহলে আমরা অন্য চেষ্টা করতাম।'
আন্দোলনের একপর্যায়ে শাহবাগ থানায় রমনা জোনের ডিসির সাথে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষকদের ছয়জনের প্রতিনিধি দল। এ সময় রবিবারের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি সুশৃংখল আন্দোলনে পুলিশ বাধা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
রমনা জোনের ডিসি মো. মাসুদ আলম বলেন, 'কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তাদের পক্ষ থেকে কিছু বাড়াবাড়ি ছিল, আমাদের পক্ষ থেকেও হয়তো কিছু বাড়াবাড়ি ছিল, সেখান থেকেই গতকালের ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয় নিয়েই কথা বলে আমি উনাদের বলেছি যে, যেটা হয়েছে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে ভুল-ত্রুটি থাকলে আপনারা ক্ষমাসুন্দর সৃষ্টিতে দেখবেন আর আপনাদের মধ্যে যদি ভুল-ত্রুটি থাকে সেটাও আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে নিবেন।'
অধিকার আদায়ে রাস্তায় মার খেতে হবে না, এই আশ্বাস পেলেও চাকরি জাতীয়করণের কোনো লক্ষণ দেখতে না পাওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. আল-আমীন বলেন, 'আমাদের অভিভাবকের কাছ থেকে অর্থাৎ শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য, সিদ্ধান্তের উপর আমরা আগামীকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীলদের আলোচনা সাপেক্ষে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।'
এখন অপেক্ষা সরকারের ঊর্ধ্বতন কারও কাছ থেকে দাবি আদায় করেই বাড়ির পথ ধরা।