ফাল্গুন মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত মাছ চাষের ভরা মৌসুম। এই সময় বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখর থাকে যশোরের চাঁচড়া বাবলাতলার মৎস্য পল্লির রেণু ও পোনা বিক্রির মোকাম।
দেশের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ মাছের পোনা যশোরের মোকাম থেকে সরবরাহ করা হয়। রুই, মৃগেল, কাতলা, শিং, টেংরা, পাবদা, গোলসাসহ সব ধরনের মাছের রেনু ও পোনা মাছ পাওয়া যায় এখানে। এসব মাছ প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক, পিকআপ, বাসের ছাদ এমনকি ট্রেনে করে পাঠানো হয় ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বরিশাল, ভোলা, ফরিদপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
একজন পোনা বিক্রেতা বলন, ‘সারাদেশ থেকে লোকজন আসে এখান থেকে মাছ নিতে। ইলিশ মাছ বাদে প্রায় সব মাছ পাওয়া যায় আমার এখানে।’
বর্তমানে এই মোকামে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের হাত ধরে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ মাছের পোনা বিকিকিনি হয়। টাকার অংকে যা দেড় থেকে ২ কোটি টাকা। আর এই হাট ঘিরে জীবিকা নির্বাহ হয় প্রায় ২ হাজার মানুষের। সম্প্রতি বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম মোকামটি।
চাঁচড়া বাবলাতলা মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি কাজী তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এখান থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মণ মাছ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।’
যশোর জেলা মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহিদুল গোলদার বলেন, ‘৫ থেকে ৬ মাস আমাদের সিজন। এর মধ্যে তিন থেকে চার মাস চলে গেছে অনাবৃষ্টির জন্য। আর এই এক দেড় মাসের মধ্যে যতটুকু পারি আমরা পুষিয়ে নিতে পারবো।’
মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক দিকে অতিরিক্ত গরমে মাছের উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে মাছের দামও বাড়তি। প্রতি মণ মাছ সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জেলার ৪২টি হ্যাচারিতে বছরে ৭২ হাজার কেজি রেণু উৎপাদিত হচ্ছে। আর ৪ হাজার ৩২৭টি নার্সারিতে উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ২২৭ কোটি ১৩ লাখ পোনা। যার বাজার মূল্য ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘এ অঞ্চল হলো মাছের পোনা বা রেণু উৎপাদনের জন্য ভালো একটি অঞ্চল। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার রেণু এবং পোনা সারাদেশের চাহিদা পূরণ করে আসছে।’
যশোরে ৯৭ হাজার ৬০০ হেক্টর আয়তনের পুকুর ও জলাশয়ে মাছ চাষ হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ১০৭ টন মাছ।