মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে দিব্যি হাঁটা লোকটির উদ্দেশ্য সড়ক পাড় হওয়া। কিন্তু চলন্ত গাড়ির সামনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনো এই পারাপার? এমন প্রশ্নে নিরুত্তর তিনি।
সড়ক পারাপারের এমন দৃশ্য ও এতে ঘটা দুর্ঘটনাও রাজধানীতে নেহাত কম নয়। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হন অনেক নগরবাসী। এমন অসচেতনতার বিষয়ে জানতে চাইলেও যুক্তির অভাব হয় না তাদের।
পথচারীদের একজন বলেন, 'আমি স্ট্রোক করা রোগী। ব্রিজ পার হয়ে উঠলে আমার সমস্যা হয় তাই হেঁটে পার হচ্ছি।'
নিয়ম মেনে গাড়ি চালালেও যখন-তখন গাড়ির সামনে চলে আসায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় বলে দাবি চালকদের।
গাড়ি চালকদের একজন বলেন, 'চলন্ত গাড়ির সামনে হঠাৎ করে চলে আসে।'
পাশে ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও চলন্ত গাড়ির সামনে ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের এই চিত্র ঢাকার রাস্তায় নিয়মিতই দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরের সড়কে এধরনের বিশৃঙ্খলা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সড়কে চলাচল করা যান, যাত্রী ও পথচারীর অসচেতনতা আর দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর অবহেলার বহিঃপ্রকাশ এমন চিত্র। সমীক্ষায় দেখা যায়, এসব কারণে ঘটা দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন পথচারীরা।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট-এআরআইয়ের দীর্ঘ দিনের গবেষণা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যায় এগিয়ে ঢাকা, যেই হার ৭০ শতাংশেরও বেশি। আর জেলা শহরগুলোতে যা প্রায় ৫৬ শতাংশের কাছাকাছি। দুর্ঘটনার শিকার হওয়া পথচারীদের মধ্যে দিনের বেলায় বেশি হতাহত হয় ৬৩ শতাংশ আর রাতে ৩৭ শতাংশ।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, শহুরে এলাকায় সড়ক পারাপারে মারা যান ৪১ শতাংশ, সড়ক ঘেঁষে হাঁটতে গিয়ে প্রাণ হারান ৩৯ শতাংশ আর সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে দুর্ঘটনায় মারা যান ১৪ শতাংশ।
সচেতনতার পাশাপাশি পথচারী বান্ধব সড়ক ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জোর দিয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, সড়কে প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য আধুনিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, 'পথচারীরা সব সময়ে জন্য ঝুঁকিতে আছে। কারণ গতি বাড়ছে। পথচারীদের জন্য পথচারীবান্ধব অবকাঠামো আমরা দিতে পারি নাই। পাশাপাশি পথচারীদেরও অসচেতনা তো রয়েছে। ফুটওভার ব্রিজগুলো পথচারীবান্ধব হতে হবে।'
এদিকে, চালক-যাত্রীসহ সকল সড়ক ব্যবহারীদের জন্য বছরব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার দাবি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি বলছে, সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া সড়কে সুশৃঙ্খল পরিবেশ অসম্ভব।
বিআরটিএ পরিচালক গোলাম রব্বানী বলেন, 'আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে র্যালি, সেমিনার করছি। পাশাপাশি বাস টার্মিনালে গিয়েও যাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে।'
বিভিন্ন ট্রাফিক আইন আর শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই যথেষ্ট নয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতা তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি পরিবার ও সমাজকে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।