ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণে প্রসিদ্ধ আছে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। মৌসুমে এই কেন্দ্র জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে পরিণত হয় মিলনমেলায়।
মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় সামুদ্রিক মাছএই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন সুনসান নীরবতা। নেই শ্রমিকের হাঁকডাক বা কোলাহল। কর্মহীন শ্রমিকের দিন কাটছে ধার-দেনা কিংবা ব্যাংক ঋণ নিয়ে। আর্থিক সংকটে এসব শ্রমিকের পারিবারিক জীবনেও নেমে এসেছে অশান্তি।
একজন শ্রমিক বলেন, 'এখানে সবাই শ্রমিক। সবার সংসার আছে, বাচ্চা আছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি চলে। এর মধ্যে এই ৬৫ দিন আমাদের পার হচ্ছে না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। আমাদের যে চাল দিয়েছে তা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের আরও চাল প্রয়োজন।'
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে ইলিশের আহরণ কমেছে ঘাটে। সরকারি ফি এড়াতে অনেকেই মাছ বিক্রি করছেন অন্য জায়গায়। এতে আয় কমেছে শ্রমিকদের।
এদিকে, অর্থকষ্ট লাঘবে অবরোধের সময়ে মৎস্যখাতে জড়িত শ্রমিকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় নেয়ার দাবি করেছে শ্রমিক ইউনিয়ন।
বরগুনা পাথরঘাটার বিএফডিসি সহকারী বিপণন কর্মকর্তা মো. রিপন হোসেন বলেন, 'আগে যে পরিমাণ বোট আসতো, এখন তার পরিমাণ কমেছে। কিছু বোট বাগেরহাটের দিকে যায়, আবার কিছু মাছ অবৈধ মার্কেটে বিক্রি হয়।'
বরগুনা পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য বাজারঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফারুক আকন বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই যেন আমাদের অনুদান দেয়। আর অনুদানের আওতায় যেনো আমাদের শ্রমিকরা আসে। এতে তাদের কষ্ট দূর হবে।'
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও প্রণোদনার আওতায় আনতে অচিরেই নেয়া হবে পদক্ষেপ।
বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, 'তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা একটা চিঠি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নেবো।'
এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৭০০ শ্রমিক ছাড়াও পাথরঘাটায় অনিবন্ধিত আরও ৩ থেকে ৪ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেন। এছাড়া, তালতলীর ফকিরহাট মৎস্য উপকেন্দ্রেও এ পেশায় যুক্ত রয়েছে আরো আড়াই হাজার শ্রমিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রণোদনা কিংবা বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হলে টেকসই হবে উপকূলের মৎস্য আহরণ।