দেশে এখন
পেশা বদলাতে চান বেদে জনগোষ্ঠীর অনেকে
একসময় হাটে, মাঠে কিংবা গ্রাম্য বাজারে দেখা মিলতো সাপুড়িয়া আর সাপখেলার। খেলা দেখে আমোদিত হতো ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ। তবে সময়ের আবর্তে সাপের খেলা দেখিয়ে আয় কমছে বেদে জনগোষ্ঠীর। তাই পেশা বদল চান অনেকেই।

বীণ বাজিয়ে সাপের খেলা দেখানোর পেশা হীরানাথ সাপুড়ের বহুদিনের। কিশোর বয়সে শুরু করে পার করেছেন জীবনের অর্ধশত বসন্ত। তবে জীবনের শেষ বেলায় এসে পড়েছেন বিপাকে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রসারে সাপের খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন মানুষ। তাই ভাটে পড়েছে আয়ে। বাধ্য হয়েই হীরানাথ এখন অন্য পেশার খোঁজে।

হীরানাথ বলেন, 'বহুত জায়গা ও জেলায় ঘুরে গুরে সাপের খেলা দেখিয়েছি। এখন তো টিভি, মোবাইল আছে। এগুলোর জন্য এখন আমরা বিলুপ্ত হয়ে গেছি। এখন সব ঘরে বসে সব দেখা যায়।'

হাটে, মাঠে কিংবা গ্রাম্য বাজারে এখন আর দেখা মেলেনা সাপুড়ে বা সাপের খেলার। পরশুরামের বাউরখুমা গ্রামের পুরো সাপুড়ে পল্লীর বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষদের পেশায় অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন অভিভাবকরাও। তবে সাপুড়ে বেদের সন্তান বলে শিক্ষাক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হয় অনেককে।

ফেনী শহরতলীর লালপোল বেদে পল্লীর সদস্যরা জানান সন্তানদের স্কুলে পড়াতে পড়তে হয় নানা অসুবিধায়। এমনকি সন্তানের জন্ম সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রেও মুখোমুখি হতে হয় জটিলতার।

একজন সাপুড়ে বরেন, 'আমাদের বাচ্চাদের পড়ালেখা নেই। স্কুল, কলেজে নিতে চায় না। বেদে বলে স্কুল থেকে বের করে দেয়।'

কয়েক বছর আগেও, কাউকে সাপে কামড়ালে সাধারণ মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সাপুড়েদের খুঁজতো। তবে, এখন বেড়েছে সচেতনতা। তাই ডাক পড়ে না তাদের।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে আনতে কাজ করছেন তারা। তাদের জীবনমান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়ার কথা জানালো স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর।

ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, 'আমাদের দু'টি ইউনিয়নে বেদে পল্লী রয়েছে। তাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সমাজে অনগ্রসর বলে যে শব্দটি রয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী আর রাখতে চান না।'

পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, 'পৌরসভার মাধ্রমে ওনাদেরকে সাবলম্বী করে রাখছি। এবং তাদের যে চাহিদা এবং আকাঙ্খা তার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ করতে পারি।'

ফেনী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'বর্তমানে ৩৪৫ জনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এবং ২৩০ জনকে শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।'

সাপুড়ে ও বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরাও যেন সমাজের মূলধারায় সমঅধিকার নিয়ে টিকে থাকতে পারে সে প্রত্যাশা সচেতন মহলের।

এমএসআরএস