দেশে এখন
0

আধুনিকায়নের ভিড়ে বিলুপ্তির পথে কুটির-মৃৎ শিল্প

একসময় দাপিয়ে বেড়ালেও এখন বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার বাঁশ-বেত ও মৃৎ শিল্প। আর সেই জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের জিনিসপত্র। ফলে মৌলভীবাজারে অনেকে বদলে ফেলেছেন এ পেশা। আর পেটের দায়ে যারা এখনো এই পেশায় আটকে আছেন, কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

গোপাল বিশ্বাস নামের এক বাঁশ-বেতের কারিগর, পরিবারের হাল ধরতে কয়েক যুগ আগে যোগ দেন এই পেশায়। এক সময় এই পেশা দিয়ে সংসার ভালো চললেও এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা।

তিনি বলেন, 'নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম, তাতে ভালো মতো চলা যায় না। সব সময় ঋণ করে চলা লাগে। সংসারের সব খরচ যোগানো যায় না।'

আগে ৬০-৭০টি পরিবার কুটির শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও এখন পর্যন্ত টিকে আছেন ৪-৫টি পরিবার। একই চিত্র এখানকার মৃৎ শিল্পেরও। বংশ পরম্পরায় ধরে রাখতে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি পরিবার। অনেকে অন্যের জন্য কাজ করছেন, আবার পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় পেশা ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ।

মৃৎ ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন একদিকে পণ্যের ভালো দাম না পাওয়া, অন্যদিকে প্রযুক্তি আধুনিকায়ন। দুইয়ে মিলে এই পেশায় টিকে থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা বলেন, মাটির জিনিস তো মানুষ আগের মতো কিনতে চায় না। যদি প্লাস্টিক না থাকতো তাইলে চলতো। লাভ কম হইলেও এটা ঐতিহ্যবাহী শিল্প আমরা ধরে রাখছি। সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাই নাই। ২-৩ বছর আগে নাম নিলেও আমরা কিছু পাই নাই। অল্প শোধে কৃষকরা ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা এ সুবিধা পাচ্ছি না। হয়তো এ ব্যবসাটা একটা সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

জেলার মৃৎ ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। তালিকা সম্পন্ন হলে ঋণ, প্রশিক্ষণসহ তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তার আশ্বাস দেন জেলা বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক মো. বিল্লাল হোসেন ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, 'ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা কুটির শিল্পকে যথাসাধ্য সহায়তা করে থাকি।'

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, 'কারিগরদের প্রণোদনা ও কম শোধে সরকার ঋণ দিচ্ছে। আমরা এ ঋণ পেতে তাদেরকে সাহায্য করবো। এই শিল্পের বিকাশে আমরা বদ্ধপরিকর।'

সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে এক সময় হারিয়ে যাবে এই শিল্প। তাই শুধু প্রতিশ্রুতিতে আটকে না থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার দাবি সংশ্লিষ্টদের।