দেশে এখন

রংপুর বিভাগের ৩৮ শতাংশ নারী কর্মজীবী

অর্থনৈতিক বৈষম্য আর কর্মসংস্থানে সুবিধাবঞ্চিত জেলার তালিকায় ঘুরে ফিরে আসে রংপুরের বিভিন্ন জেলার নাম। অথচ এ বিভাগের ৩৮ শতাংশ নারীই কর্মজীবী। এখানে একদিকে যেমন শিল্পায়নের অভাব, অন্যদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নিম্নহার। এই বিভাগের তরুণ-তরুণীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ছুটে চলা দেখে যে কারো মনে হতে পারে বালিকা বিদ্যালয় অভিমুখে যাত্রা করছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বাস্তবে তাদের অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছেন কয়েক বছর আগে। এই শিক্ষার্থীদের গন্তব্য যেখানে সেই শ্রেণিকক্ষের ভেতরের দৃশ্য যে কারো নজর কাড়বে। গ্রামের যে নারীদের পরিচয় কিছুদিন আগেও ছিলো কেবল সাধারণ শিক্ষার্থী কিংবা গৃহিণী, তারাই প্রযুক্তির জটিল কলকাঠি আয়ত্ত্ব করছেন। এমন আয়োজন নারীদের তথ্য ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের অংশ।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের নাম ‘হার পাওয়ার’। প্রকল্পটির আওতায় প্রথম পর্যায়ে রংপুর বিভাগের ৭ জেলাসহ ৪৪ জেলার ১৩০ উপজেলায় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, ছয় মাসব্যাপী এই ট্রেনিং চলবে। পাঁচ মাস ক্লাসের আর শেষের এক মাস মেন্টরশিপের জন্য। আমরা ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে বেশ ধারণা পেয়েছি। এছাড়া ওয়েব ডেলেলপমেন্ট বিষয়েও কাজ করেছি।’

শুধু প্রশিক্ষণ নয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে তাদের হাতে বিনামূল্যে একটি করে ল্যাপটপ দেয়া হয়। কেবল রংপুর বিভাগেই এমন উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৯০ জন।

ল্যাপটপ পেয়ে একজন বলেন, ‘এতোদিন ডিভাইস ছিলো না, ল্যাপটপ পেয়ে ভালো লাগছে। প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো এখন প্র্যাকটিস করতে পারবো।’

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০২২ সালে ৩৬.৩ শতাংশ থেকে সামগ্রিকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২.৬৮ শতাংশে। একক বিভাগ হিসেবে এ অর্জনে সবচেয়ে এগিয়ে রংপুর বিভাগ।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সানেম-এর প্রতিবেদন বলছে, রংপুর বিভাগের প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৩৮ জনই কর্মজীবী। তবে কর্মসংস্থানে এগিয়ে থাকলেও এ অঞ্চলের নারীদের স্বনির্ভরতার বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিবর্তনের আশা তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশমুখী কিংবা ঢাকামুখী না হয়, সেজন্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রংপুরে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’

এছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলার এসএসসি পাশ নারীদের ওমেন কলসেন্টার এজেন্ট, ওমেন ই-কমার্স প্রফেশনাল, ওমেন আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ছয় মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসে মাসে ১০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন উত্তরের নারীরা। এভাবে এ প্রকল্পের সেবা হয়ে উঠবে এ অঞ্চলের নারী বৈষম্য রোধের সহায়ক শক্তি, এমন স্বপ্ন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর।

তিনি বলেন, ‘মেয়েরা যেন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য আমাদের এই আয়োজন। এর মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কাজে এগিয়ে যাবে।’

এদিকে আইটি খাতে দক্ষতা উন্নয়নে রংপুরের পীরগঞ্জে জয় সেট সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানেও প্রযুক্তিগত উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া উত্তরের তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার খুলে দেয়া হয়েছে।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর