বছরের এ সময়টাতে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানির উচ্চতা থাকে ৮৯ ফুট। কিন্তু বর্তমানে তা নেমেছে ৮০ ফুটেরও নিচে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে হালদা নদীতে। এ নদী দেশে কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। একইসঙ্গে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা পানির ৬০ শতাংশের যোগানদাতা। সব মিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে হালদা নদীর অবদান বছরে হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে উজান থেকে পানি কমায় নদীতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে বেশি। এতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা বেড়েছে হালদার পানিতে। বর্তমানে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ২ হাজার মিলিগ্রামের উপরে। কোন কোন সময় যা ৩ হাজার মিলিগ্রামও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে নগরীর পানি সরবরাহে।
চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এর মধ্যে ২৮ কোটি লিটার যোগান দেয় কাপ্তাই হ্রদ হয়ে নেমে আসা হালদার পানি। মাত্রাতিরিক্ত লবণ শোধন করেও ব্যবহার উপযোগী করতে পারছে না ওয়াসা। এছাড়া দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা পানি উত্তোলন বন্ধ থাকায় নগরীতে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। বর্তমানে চাহিদার ৭০ শতাংশ যোগান দিতে পারছে সংস্থাটি। ফলে চালু করতে হয়েছে এলাকাভিত্তিক রেশনিং সিস্টেম।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, 'কাপ্তাই হ্রদ থেকে যে পানিটা নেমে আসে সেটাই কর্নফুলী নদীর। সেখানে পানির পরিমাণ খুবই কম। ৫টা জেনারেটরের জায়গায় মাত্র ১টা চলছে। আবার সেটাও থেমে থেমে চলে। মাঝে মাঝে পানি একেবারেই থাকে না।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছে, এক লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে লবনের পরিমাণ ৪০০ মিলিগ্রাম। আর লবণাক্ত এ পানি পান ও ব্যবহার মানব দেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হাসিনা আক্তার লিপি
লবণাক্ত পানি ব্যবহারে চর্মরোগ থেকে শুরু করে কিডনীও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানান পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হাসিনা আক্তার লিপি। তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে শরীর ফুলে যেতে পারে ও কিডনীর সমস্যা হতে পারে। হাইপার টেনশন না থাকলেও হয়ে যেতে পারে।'
লবণাক্ততা বাড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর জীব-বৈচিত্র্য। এতে নদীর ছোট ছোট উদ্ভিদ ও মাছ যেমন হারিয়ে যাবে, তেমনি ডলফিনসহ কার্পজাতীয় মাছও বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। হারিয়ে যেতে পারে মাছের অনেক প্রাকৃতিক খাবারও।
হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, 'এটা ভয়াবহ একটা বিষয়। হালদার জীব বৈচিত্র, ডলফিন সংরক্ষণ, মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে মারাত্মক হুমকি বলে মনে করি। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম নগরের মানুষের জন্যও খুব হুমকি।'
হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া
একদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ অন্যদিকে পানি সংকট। ঠিক সে অবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে ওয়াসার বিল ৬১ শতাংশ বাড়াতে চায় ওয়াসা। চলতি বছরের মার্চ থেকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে আবাসিকে ২৯ টাকা এবং অনাবাসিকে ৫৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসা। যা দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব।