বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে সরকারি সেবায় বিনামূল্যে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবিতে শুক্রবার (২২ মার্চ) কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে জনকল্যাণ সংস্থা , নির্ভয় ফাউন্ডেশন ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। এতে সুপেয় পানির সংকটে থাকা স্থানীয় জনগণ অংশ নেয়।
স্থানীয় তরুণ ও ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নারীরা সরকারি সেবায় সুপেয় পানির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা তাদের দাবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন।
এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ওয়াটার ফর পিস’ বা ‘শান্তির জন্য পানি’। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষ সুপেয় পানির চরম সংকটে জীবনযাপন করছেন। লবণাক্ততার আগ্রাসনে এখানকার পানি পানের অনুপযোগী। পানি সংকটের ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু মহল পানি নিয়ে ব্যবসা করছে যা এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অভিশাপ। এই হুমকি মোকাবিলায় লবণ পানি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বিনামূল্যে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি।
মানববন্ধনে নির্ভয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু কেন যেন সেটি আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না। সুপেয় পানির সংকট সমাধানে, ভরাট হওয়া সরকারি পুকুর ও খাল-নদী সংস্কার এবং পানির উৎসের লিজ বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
সুপেয় পানির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বাসিন্দারা
এছাড়া মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং মৌলিক চাহিদার তালিকায় পানি শীর্ষে থাকলেও এই অঞ্চলের মানুষ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের সেই অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এই মানববন্ধন আয়োজন করেছেন বলে জানান জনকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মারুফ হাসান। এসময় তিনি সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান জানান, পানিতেই শান্তি, পানিতেই সমৃদ্ধি। পানির অভাবে উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টি হয়। পানি বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ না করলে তা আমাদের গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই পানির সর্বোত্তম ব্যবহারই নিশ্চিত করার মাধ্যমে সব মানুষের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। উপকূলবাসীকে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের জন্য স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক পর্যায়ে সকল স্তরে পানির ব্যবস্থাপনায় তরুণদের কার্যকর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানিসম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং এরপর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে।