বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন জুড়েই ছিল খাবার ও কাপড়ের দোকান। আধুনিক সব খাবার দোকান আর নামীদামী ব্রান্ডের বিপণি বিতান থাকায় ভবনটি সর্বদা কোলাহলপূর্ণ থাকতো।
সব সময় ব্যস্ত থাকলেও ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন কিংবা অগ্নিনিরাপত্তার কোনো ধরনের ব্যবস্থা ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকবার নোটিশ দেয়ার মাধ্যমে সতর্ক করা হলেও কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যে বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শনিবার (২ মার্চ) সকালে ভবন পরিদর্শনে আসেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধি দল। ভবন তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থার গাফিলতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
পরিদর্শন শেষে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিন হেলালী বলেন, ‘আগুন লাগা বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে যারা নোটিশ দিয়েছিল, তারা এখন শুধু ব্যবসায়ীদের দোষ দিচ্ছে। তারা নোটিশ দিয়ে দোষ শুধু ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে তুলে দিচ্ছেন। এই ঘাড়ে তোলাতুলি বন্ধ না করলে সমস্যা সমাধান হবে না। যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে তারা মূল অথরিটি। তাদের হাতে আইন আছে, আমাদের ব্যবসায়ীদের হাতে তো কোনো আইন নেই।’
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এ ভবনে যারা ব্যবসা করতে এসেছেন তারা কি কোনো সার্টিফিকেট ছাড়া এসেছেন? সার্টিফিকেটগুলো কীভাবে পেয়েছেন? যারা ব্যবসা করতে এসেছেন তাদের সার্টিফিকেটগুলো যারা দেন তারা এতদিন কী করেছেন? আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে আগাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের শৃঙ্খলাগুলো রক্ষা করা হচ্ছে না। এটা সমুন্নতভাবে রক্ষা করতে হবে। এখন দোষাদোষী করে সামনে আগানোর সময় নেই।’
বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি আহত ১১ জনের মধ্যে ৬ জন সুস্থ হয়েছেন।
শনিবার সকালে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধ রোগীদের দেখতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘আজই সুস্থ হওয়াদের ছেড়ে দেয়া হবে। তবে বাকি ৫ জন শঙ্কামুক্ত নয়।’
এদিকে এদিন সকালে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবনে আগুন ঠেকাতে গণপূর্ত, রাজউকসহ সবাইকে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। ভবন অনুমোদন দিতে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার।’
মর্মান্তিক এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় এরই মধ্যে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলবে। যে চারজনকে ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। মামলার তদন্ত চলাকালে আরও যেসব ব্যক্তির দায়-দায়িত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এছাড়া ঘটনার পর থেকে পালিয়ে থাকা ভবনের মালিককেও খুঁজছে পুলিশ।