রক্তজবার মত পা তার। মনে হয়, ঐ তো মিলেছে স্বপ্ন। কিন্তু তাদের সাধ আর সাধ্যের ফারাক থেকে যায় রেললাইনের মতোই, কী শৈশব, কী কৈশোর কিংবা বার্ধক্যে! পথশিশু নামের শহরজুড়ে পরিচয়হীন ঘুরে বেড়ানো এসব শিশুরা, মৌলিক নাগরিক অধিকার কিংবা সামাজিক নিরাপত্তার সকল সুরক্ষার বাইরে তা সবারই জানা। কিন্তু কোনভাবে, গায়ে-গতরে খেটে যে ওরা একটু শিক্ষিত হয়ে উঠবে তারও সুযোগ নেই। কারণ জন্ম সনদের আওতায় নেই তারা।
এক পথশিশু বলে, জন্ম নিবন্ধন নাইকা, এজন্য স্কুলে ভর্তি নেয় না। কিন্তু আমি জানি না, জন্ম নিবন্ধন কী?
সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই শিশুরা যখন জন্ম নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছে না, তখন তারা প্রথমেই বাংলাদেশের যে নাগরিক হওয়ার সুবিধা আছে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের সকল সুযোগ-সুবিধা পেতে কিছু ক্ষেত্রে জন্মসনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্ট তৈরি, বিবাহ নিবন্ধন বা গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার মতো গুরুত্বর্পূণ সুযোগ-সুবিধায় দরকার জন্ম নিবন্ধন সনদ।
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ১০ লাখ কিংবা ঢাকার ৭ লাখ পথশিশুই রাষ্ট্রীয় এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ এ নিয়ে নেই আইনের কোন ঘাটতি। ২০১৮ সালের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা বলছে, পরিচয়হীন শিশুর বাবা-মা, জন্মস্থান ইত্যাদি না পাওয়া গেলেও নিবন্ধন করতে বাধা দেওয়া যাবে না। অসর্ম্পূণ স্থানে অপ্রাপ্য লিখে নিবন্ধন করতে হবে।
পথশিশুদের নিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সেখানেও তাদের জন্মসনদের বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, আইন থাকার পরও মাঠ পর্যায়ের নিবন্ধন কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভুগছে পথশিশুরা।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, ‘যখন পথশিশুদের এই জন্মসনদ দেয়া হচ্ছে না। তখন সে যেসব সামাজিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারতো সেগুলো থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।’
এদিকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় বলছে, এ বিষয়ে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও কার্যকরী ফল আসছে না। আর এখন পর্যন্ত কতজন পথশিশু নিবন্ধনের আওতায় এসেছে সেই পরিসংখ্যানও নেই তাদের কাছে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই সবশিশু জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য। এরকম কোন বিষয় নজরে আসেনি যে, আমাদের কোন সংস্থা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অস্বীকার করেছে।’
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নাগরিক স্বীকৃতি পেলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ভবিষ্যতে মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।