বাংলা এমনই এক ভাষা, যাকে রক্ষার দাবিতে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনে শামিল হন ছাত্র-জনতা। রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকতের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অধিকার হয়ে ফিরে আসে প্রিয় বাংলা।
এ ইতিহাসের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত ঢাকা মেডিকেলের নাম। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিল শুরু হয় এখান থেকে।
কিন্তু এই স্মৃতি যেন হাঁটছে বিস্মৃতির পথে। দেখে বুঝার উপায় নেই, এতো বড় অমূল্য এক ঘটনার সাক্ষী আশপাশেই আছে। সচেতন কিংবা অবচেতনেই দিনে দিনে অবেহেলিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে সেটি। শ্রদ্ধার বদলে নিদর্শনটি বরং অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে।
অবৈধভাবে দখলে থাকা জায়গাটি আর 'আমতলা' হিসেবে নেই। হাসপাতালের রোগী, স্বজন, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসন আর নগর কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রয়োজনে যেন ছোটখাটো এক বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, অন্য জায়গার মতো মাসোহারা দিয়ে এখানে দোকান বসানো হয়।
যেখানে ময়লা আবর্জনা আর পরিত্যক্ত উপকরণ ফেলা হয় সে জায়গার ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা নেই কোনো ব্যবসায়ীর।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এটার ইতিহাস তো আমরা বলতে পারবো না, এখানে আজ প্রায় ১৫ থেকে ২৫ বছর দোকানি করি। এখানে দোকান বসানো নিষেধ তারপরও আমাদের তো কিছু করার নেই, করতেই হইবো।'
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে আমরা বসি, পুলিশ আসলে আবার উঠায় দেই। মাঝে মধ্যে মন্ত্রীরা আসলে উঠায় দেই। আবার বসি এখানে, গরিব মানুষ দোকান করি।’
বছরের প্রায় পুরোটা সময় গেটের সামনের ফুটপাতে এলোমেলোভাবে ব্যবসা করে শতাধিক দোকান। এতে হেঁটে চলার কায়দাটুকুও থাকে না। দুর্ভোগে পড়তে হয় পথচারীদের। ঐতিহাসিক এই স্থানটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
এক পথচারী বলেন, ‘এইটা তো একটু কষ্ট লাগার কথা যেহেতু ঐতিহাসিক জিনিস, এগুলোরে সংরক্ষণ করা উচিত।’
২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনের আগে বদলে যেতে শুরু করে এখানকার চিত্র। সাময়িক সময়ের জন্য তৎপর হয় প্রশাসন। তোড়জোড় চলে উচ্ছেদ অভিযানের। তবে কিছুক্ষণ পর আবারও সেই পুরনো দৃশ্য।
স্থায়ী পদক্ষেপের প্রশ্নে অনেকটাই অসহায় বলছে হাসপাতাল প্রশাসন। গেটের সামনে ফুটপাতের অংশের দায় সিটি কর্পোরেশনের বলে জানান তারা। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের আশ্বাস তাদের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালের যে ইমার্জেন্সি গেট, তার পাশেই এটা অবস্থিত। এই গেটের পাশেই তারা দোকান বসাই। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান করা হয়, কিন্তু দেখা যায় পরবর্তীতে আবার দোকান বসাই।'
শুধু আমতলাই নয়, ভাষা শহীদদের নামে করা ধানমন্ডির ১৪টি সড়কের নেই তেমন কোন প্রচারণা। নামফলকগুলোও চোখের আড়ালে পড়ে গেছে। কোথাও কোথাও মুছে গেছে অক্ষর।
একজন পথচারী বলেন, ‘রাস্তার নাম্বারের হিসেবেই আমি চিনি, অন্য কোনো নামে চিনি না। নামগুলো জানা থাকলে খুব ভালো হতো।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের স্বাক্ষীসহ অন্যান্য সব স্মৃতি রক্ষার্থে নেয়া হবে যথাযথ উদ্যোগ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটি আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ইজারাও দেওয়া হয় নি, আর কোনো রকমের সম্পৃক্ততার সুযোগও নেই। যে কারণে আমরা অভিযান সবসময় করে থাকি। সামনেও করা হবে তবে সকলের সহযোগিতা লাগবে। সচেতনতার অভাবে অনেক সময় এগুলো ভেঙ্গে ফেলে তবে আমাদের নজরে যখনই আসে আমরা আবার নতুন করে সাইনবোর্ডগুলো লাগিয়ে দেই।’