দেশে এখন
0

সদরঘাটে চিরচেনা ব্যস্ততা নেই, কী করছেন কুলি-হকাররা?

রাজধানী ঢাকা, গঙ্গা বুড়ির কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এক শহর। ৪০০ বছর পুরনো যার ইতিহাস। যোগাযোগ সমৃদ্ধির জন্য একসময় বুড়িগঙ্গা নদী হয়েই আসতো পণ্য। নদীটির পাড়ে যে ঘাট ও বন্দর- তার নামই সদরঘাট। আর এই ঘাটকে ঘিরেই সম্প্রসারিত হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ একসময় পুরোপুরি নির্ভর ছিলো নৌপথের ওপর। কিন্তু সেই নির্ভরতা এখন কমেছে। প্রমত্ত পদ্মার ওপর দিয়ে সেতু হয়েছে। সময় বাঁচাতে অনেকেই সদরঘাটের পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন পদ্মা সেতু। যার ফলে এখানে কমেছে যাত্রীর চাপ। যথারীতি এখানকার হকার ও কুলিদের কাজও কমতির দিকে।

দীর্ঘদিন সদরঘাটে রুটি বিক্রি করা ফারুকের সাথে কথা হয়। আগের মতো বেচাবিক্রি নেই জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ‘আগে প্রতিদিন হাজারখানেক টাকার বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন তো যাত্রী অনেক কমে গেছে। মানুষের আয়-ইনকাম কমছে। তাই আমার বিক্রিবাট্টাও কমে গেছে।’

কথা হয় ফল ব্যবসায়ী শামসুদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর ওই রাস্তা দিয়েই লোকজন যাওয়া-আসা করে। আগের মতো আর লোক হয় না লঞ্চে। লোক না হইলে আমাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনবো কে?’

মোহাম্মদ ওয়াসিম দুই বছর হলো বদলেছেন সদরঘাটের ঠিকানা। পাশাপাশি পেশাও বদল করেছেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে বুড়িগঙ্গার তীরে কাজ করতেন। কিন্তু আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালানোই যেন দায়। তাই বাধ্য হয়ে এখন অটো-রিকশা চালিয়ে রোজগার করেন।

ওয়াসিম বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ। নিজেই চলতে পারি না। পরে ভাবলাম অনেক তো হইলো এখানে, আর কত! এরপর নিজেই একটা অটো-রিকশা বানালাম, এখন এই অটো চালাই। সদরঘাটের চেয়ে এখন রিক্সা চালিয়েই বেশি টাকা আয় করি।’

পেশা ছাড়লেও সদরঘাটের মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি। তাই কাজের ফাঁকে এখনও এসে ঘুরে যান পুরনো জায়গায়। দেখা করেন পরিচিতদের সাথে, থাকেন টার্মিনালে। তিনি বলেন, অনেক মানুষ তো এখান থেকে চলেও গেছে। আবার কিছু মানুষ এখানে আছে। কী করবে, অন্য কাজ তো আর পারে না। লস হইলেও সদরঘাটে পড়ে থাকে তারা।

পদ্মা সেতু চালুর পর সদরঘাটে কমেছে যাত্রী। শুধু সেতু নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চ থেকে মুখ ফিরিয়েছেন।

বিআইডব্লিইউটিএ বলছে, আগে প্রতিদিন ৯০-৯৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেলেও এখন ছাড়ছে ৬০-৬২টি। ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতেও আগের মতো যাত্রী নেই। যে কারণে লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে দাবি লঞ্চ মালিকদের।

যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি লঞ্চের রুট। ঢাকা-হুলারহাট, ঢাকা-আমতলী, ঢাকা-মাদারীপুরসহ অনেক রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিআইডব্লিইউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা আলমগীর কবির এখন টিভিকে বলেন, ‘ঢাকা-হুলারহাট আমাদের নৌরুটে অন্যতম ব্যস্ত রুট ছিলো। আগে ৫ থেকে ৭টি লঞ্চ চলাচল করতো। প্রায়ই আপনারা সংবাদ করতেন, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে, ছাদে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে লঞ্চ। কিন্তু এখন এই রুটে মাত্র একটা লঞ্চ চলে। তাও নিয়মিত না।’

দীর্ঘদিন সদরঘাটে হকারি করা অনেকেই ছাড়তে চান না এই পেশা। আবার যারা ছাড়তে চান তাদের নেই পর্যাপ্ত পুঁজি, জানেন না অন্য কাজও। শ্রমজীবী এই মানুষগুলোকে নিয়ে কী ভাবছে কর্তৃপক্ষ?

নৌপথে নতুন রুট করে লঞ্চ চলাচল ও যাত্রী বাড়ানো নিয়েও কাজ করেছে বিআইডব্লিইউটিএ। লঞ্চ মালিকদের সাথে আলোচনাও হয়েছে। তবে খুব একটা আশার মুখ দেখেনি নতুন রুটের পরিকল্পনা, এমনটিই জানান বন্দর কর্মকর্তা আলমগীর কবির।

অন্যদিকে, পণ্যবাহী লঞ্চে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়া কমিয়ে কিছুটা যাত্রীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে ঘাটের শ্রমিক-কর্তৃপক্ষরা।

ঢাকা ঘাট শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নয়ন বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেয়ে আমরা কথা বলছি। তাদেরকে জানাচ্ছি, আপনারা লঞ্চের মাধ্যমে পণ্য পাঠান। আমরা কম খরচে সেটা পৌঁছে দেবো।’

এতোকিছুর পরও সদরঘাটে কী ফিরে আসবে চিরচেনা সেই ব্যস্ততা?