তারা বলছেন, এদের মধ্যে রোহিঙ্গা নিধনে কেউ জড়িত কিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে তদন্ত করে ফেরত পাঠানো উচিত। তবে এসব সামরিক ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে দেরী না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকদের আরেকটি পক্ষ।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক জান্তার নৃশংস গণহত্যার শিকার হয়ে যেভাবে ঢলের মত আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশমুখি হয়েছিলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী; ৬ বছর পর সংখ্যায় ততটা না হলেও সেসব সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে ঢুকছে জান্তা সরকারের সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিক সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে। এসব সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নিরস্ত্র করে রাখা হয়েছে বিজিবির হেফাজতে।
কুটনৈতিক পর্যায়ে যখন বিদেশি কর্মকর্তাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনা চলছে, তখন প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সামরিক সদস্যদের প্রত্যাবাসনের এ উদ্যোগ কতটা ভালো?
আশ্রয় নেয়া এসব কর্মকর্তাদের মিয়ানমার জান্তা সরকারের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করাটা বাংলাদেশের উচিত হবে না বলে মনে করেন বিমানবাহিনীর সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইশফাক ইলাহি চৌধুরী।
বলেন, 'তাড়াহুড়োর কোন প্রয়োজন নাই। যুদ্ধের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে দেখতে হবে। কারণ তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে গিয়ে যদি যোগ দেয়, তখন তাদেরকে আবার রাখাইনদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হতে পারে। তারা আবার গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হতে পারে। আমাদের দৃষ্টিতে তারা অনুপ্রবেশকারী। এজন্য আমাদের আইন আছে, সীমানা লঙ্ঘন করার দায়ে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারি।'
ফেরত পাঠানোর পর, বিচার না পুরস্কার: এসব সামরিক কর্মকর্তাদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটবে তা নিয়েও রয়েছে নানামাত্রিক আলোচনা। এই বিশ্লেষকরা মনে করেন প্রত্যাবাসনের এই ইস্যুতে বাংলাদেশের বরাবরের মত পেশাদার থাকা উচিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম বলেন, 'এই মুহূর্তে আমাদের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নাই। তাদেরকে প্রত্যাবাসিত করাই আমাদের মূল বিষয় হওয়া উচিত। কারণ এতে সমস্যা বাড়বে। বাংলাদেশের ওই সমস্যায় পা দেওয়া উচিত হবে না।'
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'আইসিসি যদি চায় তাহলেই একটা চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে। আমি মনে করি তাড়াতাড়ি পাঠানো গেলে দ্রুত আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।'
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চোখেও পেশাদার থাকা উচিত যুদ্ধ নিরপেক্ষ বাংলাদেশের। এ ক্ষেত্রে আইওএম, রেডক্রস কিংবা রেডক্রিসেন্টের মত অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থী সেনাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করা ভালো বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন তারা।