পরিবারের আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এই শিশুদের প্রতি একটু স্নেহের পরিবর্তে চারপাশ থেকে শুধু লাঞ্ছনা-বঞ্চনা জোটে। প্রতিবেশি এমনকি নিকট আত্নীয়রাও রোজগারে ভাগ বসাতে চায়। এই সোনামণিদের মুখে এমন নির্মম বাস্তবতা উঠে আসে।
এক পথশিশু জানায়, 'পড়াশোনা করতাম বই ফালাইয়া দিছিলো আর স্কুলে নেয় নাই।' আরেকজন জানায়, 'বাবা মরে গেছে, মা আরেক জাগায় বিয়া করেছে। এই কারণে আমরা পথেঘাটে থাকি। সারাদিন বোতল কুড়াই আর সবার কাছে টাকা চাই, চাইয়া চাইয়া খাই।'
'এদের ফেলে ওগো ধনী, ওগো দেশের রাজা! কেমন করে রোচে মুখে মন্ডা- মিঠাই-খাজা?' কবি নজরুলের রেখে যাওয়া এই প্রশ্ন এখনো ঘুরপাক খায়। সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই শিশুরা অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে সবার চোখের সামনে বেড়ে উঠলেও সমাজপতি বা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে যায়।
এই শিশুদের মানব সম্পদে রুপান্তরের কাজে কেউ হাত দেয় না। তাইতো কখনো কখনো মাদকের মতো অন্ধকারগলিতে স্বপ্ন-সম্ভাবনা হারিয়ে যায়।
অযত্ন আর অনাদরে নেশার দিকে ঝুকছে পথশিশুরা
স্থানীয়রা বলেন, তাদের কোন পরিচয় বা কর্ম নাই। তাই তারা দিন দিন নেশার দিকে চলে যাচ্ছে এবং সমাজে তাদের খুব ঘৃণার চোখে দেখা হয়।
রাস্তা-ঘাটে বসবাসকারী শিশুদের মোট সংখ্যা না থাকলেও ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ শিশু নিয়ে জরিপ শেষে ইউনিসেফ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। অথচ একটু সহযোগিতা-সহানুভূতি পেলে পথে-ঘাটে ঠোকর খেয়ে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা মানবসম্পদ হতে পারে।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন বলেন, 'সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কাজ করে। তাদের মাধ্যমে আমরা এই শিশুদেরকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে পারি। এতিম বাচ্চাদের জন্য সরকারি শিশু পরিবার রয়েছে। এদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি, কাজ করার সুযোগ রয়েছে।'
ইউনিসেফ'র সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২' শীর্ষক জরিপ বলছে দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে রাস্তায় আসা এই শিশুদের ৮২ শতাংশই ছেলে।
অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে রাস্তায় থাকা শিশুদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই পড়তে বা লিখতে পারে না। প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ৬ শতাংশ শিশু এতিম অথবা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তাদের জানা নেই।