ভারত থেকে নেমে আসা গোমতী নদী বাংলাদেশে প্রবেশের পর ৯৫ কিলোমিটার পেরিয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীতে। আদর্শ সদর উপজেলা থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮টি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত এ নদীর অববাহিকায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের আবাদ হয় সারাবছর। আর তাতে কৃষি অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ফসল। পলি জমা চরে ফসল উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা দেয় গোমতী নদীর পানি। সবজির বাম্পার ফলন গোমতী চরের কৃষকদের সাফল্যের অর্জন।
যে গোমতীর চরে সবজি ফলিয়ে রুটি রুজি করেন স্থানীয় মানুষরা সেই চরই ধ্বংস হচ্ছে আয়োজন করে। ২০ থেকে ৪০ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটায় বর্ষায় পানি উঠে চরের বসতিগুলোতে। নিরুপায় নদীপাড়ের মানুষরা তখন বাধেঁর উপর আশ্রয় নেয়। শতশত মানুষের আহাজারি গোমতীপাড়ে। শুকনো মৌসুমে মাটি কাটার ধুম পড়ে নদীর চরে।
স্থানীয় একজন জানান, 'যাদের জমি তারাই বিক্রি করে রেখেছে। একের পর এক জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।'
নির্বিচারে মাটি কেটে নদীর পরিবেশ নষ্ট করছে প্রভাবশালীরা। উর্বর মাঠ ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে ইট। নষ্ট হচ্ছে ফসলের মাঠ। যে মাঠে সবুজ সবজি ফলতো সেই মাঠ হারিয়ে কৃষকরাও ক্ষুব্ধ। অপরদিকে বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে বর্ষায়।
অন্য একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'একদল সন্ত্রাসী মাটি দখল করে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইটভাটার মালিকরা বিভিন্নভাবে ভোগদখল করে রাখছে। এরজন্য নদী ভেঙে সব চলে যাচ্ছে।'
আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকায় নদীর দু'পাড়ে মাটি কাটা হচ্ছে প্রায় তিন শতাধিক পয়েন্টে। কোথাও কোথাও উজাড় হয়েছে বন। কোথাও আবার ঝুঁকিতে সেতু কালভার্ট।
গোমতীর চর এবং ফসলের মাটি কেটে নেয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। মাটিকাটা রোধে সমন্বিতভাবে আইনের প্রয়োগ করা জরুরি বলে মনে করেন কুমিল্লার খামারবাড়ি কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আইয়ুব মাহ্মুদ। বলেন, 'যারা গোমতীর তীরে মাটি কেটে ফসলের জমিকে নষ্ট করছে তারা আইনগতভাবে অপরাধ করছে। আমাদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবিষয়ে ভূমিকা রাখলে আমাদের জমিগুলো রক্ষা হবে।'
এদিকে দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত গোমতীর চর পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসন। মাটিকাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
কুমিল্লা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'গোমতী নদী রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করবো। এ নদীই আমাদের পানির প্রধান উৎস।'
গোমতীর চরে অবাধ মাটি কাটায় ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ প্রকৃতি। পাশাপাশি উড়ছে ধুলো বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। কৃষি অর্থনীতির ক্ষতিটাও নেহায়েত কম না। গোমতীর চর ধ্বংস করায় তার প্রভাব পড়ছে বাজারে। সরবারহ কমে যাওয়ায় বাড়ছে সবজির মূল্য।