দেশে এখন
0

শহর থেকে কেন হারিয়ে যাচ্ছে কাক?

শহরের 'জাতীয়' পাখি বলা হতো কাককে। কিন্তু সেই কাকের আনাগোনা শহরগুলোতে দেখা যাচ্ছে না আগের মতো। সমাজতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ কাকরা না কি মনে রাখতে পারে কে বন্ধু আর কে শত্রু? ঝাড়ুদারপক্ষী কাকের অভাব ধরা পড়ছে শহরের ময়লার ভাগাড়গুলোতেও।

প্রেমের মত সুন্দর আর কি আছে! একসাথে অনেকটা পথ হাটা। কত কথা, গল্প আর নতুন স্বপ্নের মিতালি। মানুষের মত প্রেমে বুদ হয়ে রয় কাকেরাও। তবে মানুষ সঙ্গী ছেড়ে যায়। নতুন মানুষের সাথে ঘর বাঁধে। কিন্তু কাক একবার তার সঙ্গী হারালে আর ঘর বাঁধে না। এমন কথায় শোনা যায় লোকমুখে।

কাক ও মানুষের ভারোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে এক ছবিতে। ছবি: এখন টিভি

সাহসী পাখিদের মধ্যে অন্যতম কাক । একটি বিপদে পড়লে দল বেঁধে এগিয়ে যায় সবাই। প্রতিশোধ নিতে ভুল করে না তারা। মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। আর খাবার শেষে অতিরিক্ত খাবারের অপেক্ষায় থাকে সে। খাবার শেষে প্লেট রাখতেই গুটি পায়ে এগিয়ে যায় খাবারের কাছে। ময়লা বলে ফেলে দেওয়া জিনিসগুলো খেয়ে, শহর পরিষ্কার রাখে সে। তাই নাম পেয়েছে ঝাড়ুদার।

কাকের সাথে মানুষের যে সখ্যতা হয়তো তা আমাদের আলাদা করে নজর কাড়ে না। কখনও শীতের বিকেলে শিশুদের আনন্দের খোরাক হয় কাক। আবার কখনও প্রভাতে প্রবীণদের হাটার সঙ্গী হয় সে। তবে কাকের সাথে গল্প নেই এমন মানুষ পাওয়া ভার।

ভোরে কাকের সাথে উড়তে চায় মানুষ। ছবি: এখন টিভি, রমনা পার্ক, ঢাকা

একজন পথিক জানান, 'গ্রামে থাকতে ঘুম ভাঙ্গতো মোরগের ডাকে। আর শহরে আসার পর ভাঙ্গে কাকের ডাকে। কিন্তু গেল দু'বছর যাবৎ কাকের ডাক আর তেমন শুনতে পাওয়া যায় না।'

কাক মূলত সামাজিক ও গনতন্ত্রমনা পাখি। মধ্য এশিয়ার কাক যে অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো। আর সংখ্যার দিক থেকে ২০০ বিলিয়নে পৌঁছালো, সেটা এই গুণের কারনেই। বাসা তৈরি থেকে শুরু করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে তারা সবাই আলোচনায় বসে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলে একই শব্দে ডেকে সম্মতি প্রকাশ করে। এরপর তারা আকাশে উড়ে এর বর্হিপ্রকাশ প্রদর্শন করে।

কোনো কাক নিহত হলে অপর কাকেরা এসে শোক প্রকাশ করে। তবে মৃতের খাবার বা সম্পদের দখল নেয় না। কাকেরা দায়িত্ববানও বটে। শিশু কাক চার সপ্তাহের মধ্যে আলাদা বাড়িতে উঠে যায়। নিজের খাবার সংরক্ষণ ও হাতিয়ার ব্যবহারে পারদর্শী পাখিকূলের মধ্যে বুদ্ধিমান এই কাকপক্ষী। কাকের মগজ পাখিদের মধ্যে আকারে দ্বিতীয়, তোতার চেয়ে ছোট। কাকের সঙ্গে কে ভাল আর কে খারাপ আচরণ করলো সেটা তারা মনে রাখতে পারে।

চিত্র শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, 'আমার বাসার ছাদে কাক বাসা বানিয়েছিল। ছাদের গাছে পানি দিতে একজন উঠে। কোনো কারণে ডাল থেকে কাকের বাসাটা ভেঙ্গে ফেলেছিল। কোথায় থেকে যেন কয়েকশ' কাক চলে এসেছিল। এসে ওকে আক্রমণ করেছিল।'

এখন আর আগের মতো দল বেঁধে থাকতে দেখা যায় না কাক। ছবি: এখন টিভি

শহরের জাতীয় পাখি বলা হতো কাককে। একসময় ঢাকার মানুষের ঘুম ভাংগতো কাকের ডাক শুনে। তবে এখন শহরে কাক খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে এভাবে কমতে থাকলে কাক এক সময় বিরল প্রাণিতে পরিণত হবে। চীনের চড়ুই পাখির মত আমাদেরও আমদানি করতে হতে পারে কাক।

কাক দেখতে কালো আর কর্কশ স্বরের কারনে অনেকের পছন্দের পাখির তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি। আর স্বাদের দিক দিয়ে কাকের মাংস তিতকুটে তাই শিকারী পাখি বা প্রাণীদের কাকের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। তবে আগ্রহ ছিল জীবনানন্দের, ভোরের কাক হয়ে এই বাংলায় ফিরতে চেয়েছেন তিনি।

কাকের রয়েছে সমাজতান্ত্রিক মনোভাব। বুদ্ধিবৃত্তিতে আইনস্টাইনের সঙ্গে তুলনা করা, প্রবল প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন কাক নিজ সমাজে সাম্যের কথা বলে। রয়েছে তার সমাজ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা । শিল্পীচার্য জয়নুল আবেদিন থেকে শুরু করে রনবীরের আঁকা কাক আমরা পাই সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্যের পর্যবেক্ষক ও সাক্ষ্য চরিত্র হিসেবে।

এসএস

আরও পড়ুন:

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর