মানিকগঞ্জে সাভার গ্রামের এক বাসিন্দার নাম শামসুল হক। ৩০ বছর আগে তিনি দুটি তাঁত দিয়ে শুরু করেন বুননের কাজ। বাজার ও চাহিদা ভালো থাকায় নিজস্ব পুঁজি এবং ঋণ নিয়ে ব্যবসায় যুক্ত করেন ১৫টি তাঁত। কিন্তু কাঁচামালের দাম বাড়া এবং ঋণগ্রস্ত হওয়ায় এখন সচল রয়েছে মাত্র ২টি। তাঁতিদের মজুরি দিতেই হিমশিম অবস্থা তার।
শামসুল হক বলেন, '১৫টি তাতেঁর মধ্যে মাত্র দুইটি তাঁত চলে। তাও সপ্তাহে মাত্র তিনদিন চালাতে হয়। তাঁতিদের মজুরি দিতে পারি না ঠিক মতো।'
শুধু শামসুল হক নয়, একই অবস্থা গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশো' তাঁত মহাজনের। কাঁচামালের দাম বাড়লেও আশানুরূপ বাড়েনি কাপড়ের দাম। আগে সপ্তাহে একেকটি কারখানায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার পিস কাপড় উৎপাদন হলেও এখন নেমে এসেছে তিন থেকে চার হাজারে। নানা প্রতিবন্ধকতায় স্বল্প পরিসরে ব্যবসা ধরে রেখেছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন তাঁত মালিক ।
মালিকরা বলেন, আগে যে সুতা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি কিনতাম তা এখন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। আমরা যে গাড়ি নিয়ে কাপড় বিক্রি করতে যাই সে গাড়ির ভাড়া দিতে আমাদের কষ্ট হয়ে যায়। আমরা তাহলে কিভাবে সুতা কিনবো?
চাহিদা ও বিক্রি কমে যাওয়ায় কারিগরদের মজুরি অর্ধেক করেও ঠিকমত পারিশ্রমিক দিতে পারছেন না মহাজনরা। অপরদিকে, পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অল্প হওয়ায় পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন অনেক কারিগর।
তারা বলেন, একবছর আগেও আমরা সপ্তাহে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করতাম। এখন সপ্তাহে মাত্র দুইদিন কাজ করতে হয়। কোনো আয় নেই এখন। সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ পিস কাপড় বুনাইতাম। এখন কাঁচামালের বাজারদাম বেশি হওয়ায় আমরা তা পাছি না।
তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখতে মালিকদের ট্রেনিং, সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি-বেসরকারি সহায়তাসহ নানা পরিকল্পনার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান।
তিনি বলেন, 'পণ্যের মান আরও ভালো করতে হবে। তাদের মার্কেটিং টেকনিকে নতুনত্ব আনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। এরকম কিছু সমস্যা আমরা খুজেঁ বের করেছি। তাদের এসমস্যা সমাধানে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সাহায্য করা হবে।'
মহাজনদের স্বল্প সুদে ঋণ, সুতার দাম কামানো ও উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করলেই আবারও ঘুরে দাঁড়াবে মানিকগঞ্জের তাঁত শিল্প এমনটাই প্রত্যাশা এ পেশার সাথে জড়িতদের।