দেশে এখন
0

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান

শিক্ষায়-সমাজে-রাজনীতিতে-প্রশাসনের প্রতিটি কাঠামোতে নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান। তবে এখনও গুণগত পরিবর্তনের প্রশ্নে নারীর দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় প্রতিনিয়ত। নারীকে সংরক্ষিত আসনে নয়, বরং রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও অধিকার আদায়ের সরব অবস্থানই নারীকে "দ্বিতীয় লিঙ্গ" বা "অধস্তন শ্রেণির" পরিবর্তে রাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদায় সমুজ্জ্বল করতে পারে।

হাজার পাহাড়ের দেশ রুয়ান্ডা। এক সময়ের শান্তিরক্ষী দিয়ে পাহারা দিতে হলেও এখন সেটি বিশ্বে রোলমডেল। নারীর ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সারা বিশ্বে রুয়ান্ডা নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।

দেশটির জনসংখ্যার ৩৫-৩৮ শতাংশ নারী। সংসদে নারী নেতৃত্বের ৬১.৩%। যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত সংঘাতপূর্ণ রুয়ান্ডাকে পাল্টে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন বজায় রেখে নীতি নির্ধারণ, রাজনীতি, প্রশাসন পরিচালনায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যারা ক্ষমতায়নের সাথে সক্ষমতা ও দক্ষতার প্রমাণ রেখে চলছেন রুয়ান্ডার ভোটারদের কাছে।

অনেক দিক থেকেই রুয়ান্ডার ধারেকাছে নেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের মতো পশ্চিমা দেশ। লৈঙ্গিক সমতার দিক থেকে বিশ্বের সেরা ৫ দেশের একটি রুয়ান্ডা। আয় বৈষম্যও নগণ্য। মাঠ থেকে প্রশাসনে রুয়ান্ডার ৮৬ শতাংশ নারী কর্মজীবী।

দেশটিতে ৮০ শতাংশ বৈষম্য কমার পেছনে নারীবন্ধব পরিবেশ বজায় রাখা, আয় বৈষম্য কমাতে বেশ কিছু নীতি পরিবর্তন, আইন ও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার মূল দায়িত্বে ছিলেন সংসদের নারীরা। এরপরও দেশটি মনে করে এখনো নারী সহিংসতার বিচার, নারীদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা দেশটির চলার পথের অন্যতম বাধা।

রাজনীতিতে ক্ষমতায়ন ছাড়া নারীর পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। ৫২ বছরে শিক্ষা-সামাজিক রাজনৈতিক প্রশাসনে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অনেকে সংরক্ষিত আসন থেকে বেরিয়ে এবার ভোটের মাঠে সরাসরি প্রতিদ্বন্ব্দিতা করছেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, 'যোগ্যতার ক্ষেত্রে একটু কমবেশি থাকলেও নারীদেরকে প্রধানমন্ত্রী প্রাধান্য দেন। যাতে এলাকাভিত্তিক তারা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে এবং নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠে।'

সংসদে নারীদের অবস্থান রাষ্ট্র কাঠামোর চাবি ব্যবহারের সক্ষমতা একজন পুরুষ সংসদের থেকে কম নয়। বরং সমান। কিন্তু পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে প্রান্তিক নারীরা অনেক এগিয়ে। এছাড়া দক্ষতা প্রমাণে নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, সংসদ উপনেতাও নারী। মতিয়া চৌধুরীও উচ্চপর্যায়ের একজন নেত্রী। আওয়ামীলীগ যদি ঝুঁকি নিয়ে হলেও অধিক সংখ্যক নারীদেরকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এটা অনেক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।'

তবে নারী নেত্রীরা বলছেন নারীর অংশগ্রহণ সংসদে যতটা ধন্যবাদ জ্ঞাপনে ও বিরোধিতায় সরব ততটাই পিছিয়ে নারীর পথ মসৃণ করার দাবিতে। তা যেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করে।

ফওজিয়া মোসলেম বলেন, 'নারীর ব্যক্তিগত অধিকার যদি সংরক্ষিত না হয় তাহলে নাগরিক অধিকারের সুফল কখনও ভোগ করতে পারবে না। যেসব নারীরা বের হয়ে আসছে তারাও সমাজের চিরাচরিত কাঠামো ভেঙে বের হতে পারছেন না। গত পাঁচ বছরে সংসদে নারীরা তেমন কথা বলার সুযোগ পায়নি বলেই চলে। সুতরাং নারীর যতটুকু ক্ষমতায়ন হয়েছে তাতে সাধারণ নারীদের জীবনে কোন প্রভাব পড়ছে না।'

তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিতে শুধু সংখ্যায় নয় নারীর প্রতি বৈষম্য ও সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থাকে চিহ্নিত করে সমাজকে সমঅংশিদারিত্বে উদ্বুদ্ধ করতে গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন রাজনীতির টেবিল থেকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম বলেন, 'নারী সবসময় সেকেন্ড জেন্ডার আর মা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। সে কখনও মানুষ হয়ে উঠতে পারছে না। তাই সবসময় সে প্রাপ্যটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারীকে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিকভাবে নারীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গাটা তৈরি হলে নারীরা এগিয়ে যাবে।'

রাজনীতিতে নারী ও নারীর রাজনীতি দুটো বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেখানে রয়েছে রাষ্ট্রের সব সম্পদে সমান মালিকানার অধিকার। যেখানে জনগণের সম্পদের মালিকানা বণ্টনেরও প্রশ্নও আছে। যেখানে নারীর সব অংশিদারিত্ব পাল্টে দিতে পারে রাষ্ট্রের প্রাধান্যের কাঠামো।