শীতের প্রকৃতির চলমান এই রূপ খেজুরগাছ থেকে রস আহরণের জন্য আশীর্বাদ। তাইতো রস আহরণ ও গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটছে গাছিদের।
টাঙ্গাইল অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা প্রতিটি খেজুরগাছ স্থানীয়দের কাছ থেকে ৮শ' থেকে ১ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন উত্তর জনপদের গাছিরা। তাদের দাবি, গাছ প্রতি প্রায় ৩ থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত রস আহরণ করতে পারছেন তারা। যা মানে ও পরিমাণের দিক থেকে অন্য অনেক জেলা থেকে সেরা।
গাছিরা বলেন, কোন গাছে ১ কেজি আবার কোনটাতে ৫ কেজি রস পাওয়া যায়। দেড়-দুই হাজার টাকার বেচাকেনা হয় রোজ। ৬ কেজি রসে ১ কেজি গুড় হয়।
সেরা মানের এই কাঁচারস ও রসে তৈরি গুড়ের স্বাদ নিতে প্রতিদিন ভোরেই নানা প্রান্তের মানুষ ভিড় করেন গাছিদের অস্থায়ী আস্তানায়। প্রতি লিটার রসের স্বাদ নিতে গুণতে হয় ৮০ থেকে ১শ' টাকা আর প্রতি কেজি গুড় ৫ থেকে ৬শ' টাকা। বাণিজ্যিক বাগান করতে সহায়তা চান তারা।
রস ও গুড় ক্রেতারা বলেন, 'তাদের রস আহরণের প্রক্রিয়া খুব ভালো। কোন পাখির মুখ লাগানোর সম্ভাবনা নাই। এখান থেকে বাড়ির জন্য গুড় নিয়েছি। এই গুড় দিয়ে পিঠা বানিয়েও খেয়েছি।'
কাঁচা রস মুখরোচক হলেও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় রস ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া। বলেন, 'নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশেরও বেশি। তাই কাঁচা খেজুরের রস পরিত্যাগ করা উচিত। অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে। তবে গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে।'
জেলায় খেজুর গাছের প্রকৃত সংখ্যা ও বাণিজ্যিক চাষাবাদ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে খেজুরগাছ চাষের বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতার কথা জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক।
মো. নুরুল ইসলাম বলেন, 'টাঙ্গাইল জেলায় যেন বেশি করে খেজুরের গাছ লাগানো হয় সে ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। খেজুর রস এবং গুড় যেন একদিন ঐতিহ্যবাহী পণ্যে পরিনত হয় সেজন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।'
জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিনশ মণ কাঁচা রস আহরণ ও দুই মণ গুড় উৎপাদন করা হয়।