ফেনী পৌর শহরের ১৮টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতার জন্য রয়েছেন ৪ শতাধিক কর্মী। পরিবারের অন্য সদস্য মিলিয়ে যাদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। শহরের রেলস্টেশন, সুলতানপুর ও কোর্ট বিল্ডিং এলাকার কয়েকটি কলোনীতে অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীর বসবাস।
স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মেয়ের জামাই, আত্মীয় স্বজনসহ পরিবারের ১০ জন হলেও একটি কক্ষেই থাকতে হয়। আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসার অপ্রতুলতায় ভোগান্তি যেন তাদের নিত্যসঙ্গী।
হরিজনপল্লীর বাসিন্দারা বলেন, 'আমাদের রান্না করার ঘর নাই, থাকার জায়গা নাই। একটা ঘরেই সবাই থাকি।'
শহর জনপদকে পরিচ্ছন্ন করে সমাজের মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুললেও অনেকটাই অবহেলায় তারা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বলেন, 'মাসে বেতন পাই মাত্র ৪ হাজার টাকা। খাওয়া-দাওয়াতেই সব টাকা শেষ হইয়া যায়। পোলাপানদের পড়াশোনা করাইতে পারতেছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি।'
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে হরিজনপল্লীর এই হাসিখুশি শিশুদের জীবন
গবেষকরা বলছেন সমাজের কোনো সম্প্রদায়কে পিছিয়ে রেখে সভ্যতা বিকশিত হয় না। সেজন্য সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবর্তন দরকার হরিজন সম্প্রদায়েরও।
সাংবাদিক ও গবেষক আরিফুল আমীন রিজভী বলেন, 'সমাজে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষগুলো অনেক পিছিয়ে আছে। তাদরকে সামনে এগিয়ে আনার জন্য মানবিকতার জায়গাটা নিশ্চিত করতে হবে।'
তাদের জীবনমান উন্নয়নে পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগের কথা জানালেন ফেনী পৌরসভার মেয়র।
নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, 'তাদের আবাসনের জন্য হরিজন পল্লীতে ৫ তলা দুইটি ভবনের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি এক-দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।'
ব্রিটিশ আমলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চা-বাগানের কাজ, পয়োনিষ্কাশন কাজের জন্য ভারতের নানা অঞ্চল থেকে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে এ দেশে আনা হয়।
তাদের থাকতে দেয়া হয় কাজের জায়গা কলোনিতে। জানা যায় এই গোষ্ঠীকে সম্মানজনক অবস্থান দেয়ার জন্য মহাত্মা গান্ধী তাদের নাম দিয়েছিলেন হরিজন।