গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বহুতল ভবন হেলে পড়া নতুন করে আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামে। বিশেষ করে, সম্প্রতি নগরীর পাহাড়তলী ও বায়েজিদ এলাকায় দুটি বহুতল ভবন হেলে পড়ে। সরিয়ে নেয়া হয় বাসিন্দাদের।
সাথে কিছুদিন আগের ৫ মাত্রার ভূমিকম্প কাঁপন ধরিয়েছে নগরবাসীর বুকে। ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় নগরীর ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবনই ভুমিকম্পের ঝুঁকিতে। তাতে বলা হয় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই বিপর্যয় নামবে চট্টগ্রাম শহরে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কী কিছু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ?
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনছারি বলেন, 'পর্যাপ্ত প্রকৌশল প্রযুক্তির দরকার। বৃহৎ প্রকল্প আকারে না হলে এই কাজটি করা অসম্ভব। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হয়তো আমরা চিহ্নিত করতে পারবো।'
খালের পাশে স্থাপনা নির্মাণে পাড় থেকে অন্তত ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে স্থাপনা নির্মাণের বিধান রয়েছে। সে নিয়ম না মানায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৩ হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয়। এখনও বহু ভবন ঝুকিঁপূর্ণ। কোনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে, কোনটি আবার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে এসব ভবন তৈরির সময় কর্তৃপক্ষ কেন নির্বিকার ছিল? আর এখন ভাঙতে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জানান, 'বিল্ডিং খালের পাড়ে আসা উচিত নয়। খালের পাড়ে অনেক ভবন থাকার বিষয়টি জ্ঞাত। কাজেই জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টা কর্তৃপক্ষের সবার আগে ভাবতে হবে।'
প্রতিটি ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। দেয়া হয়েছে প্রতিবেদন। তবে সেসব প্রতিবেদনেরও সুপারিশ রয়ে যায় ফাইলবন্দি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, 'তদন্ত কমিটি মারফত যে সুপারিশগুলো আসবে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বসবাসকারী-ভবন মালিকরা যদি মান্য করে, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।'
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণের ফলে মেগাসিটির রূপ নিচ্ছে বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম। কিন্তু এ নগরী কি সুপরিকল্পিত আর বাাণিজ্যবান্ধব হচ্ছে? নাকি আমাদের অবহেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এক নগরীর রূপ পাচ্ছে চট্টগ্রাম?