পাট আর গরুর গাড়ি এই নিয়ে সরিষাবাড়ী। নদীমাতৃক উপজেলা হওয়ায় জামালপুরের এ ছোট শহরটি ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠে পাটকে কেন্দ্র করে। পরবর্তীতে এখানকার পাটের ব্যবসার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সুদূর ইংল্যান্ড পর্যন্ত। পাট ছাড়াও উপজেলার সুনাম ছড়িয়েছে 'প্যারা সন্দেশ' তৈরির জন্য।
জামালপুরে ঘুরতে গিয়ে প্যারা সন্দেশের স্বাদ নেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীর হাত ধরে এই সন্দেশ পৌঁছেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এই প্যারা সন্দেশ তৈরির ইতিহাস প্রায় শত বছরের পুরানো।
ক্রেতারা বলেন, 'প্যারা সন্দেশ হলো আমাদের সরিষাবাড়ীর ঐতিহ্য। এই বিশেষ মিষ্টি সারাদেশে জনপ্রিয়। এটিকে যেন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় আমরা সেই দাবি জানাই।'
প্যারা সন্দেশ তৈরিতে দুধের ক্ষীর তৈরি করে তাতে চিনি ও ক্ষীরের মিশ্রণের সঠিক অনুপাতের প্রয়োজন হয়। এর তারতম্য ঘটলে স্বাদ ও গুণগত মান দুটোই নষ্ট হয়। এটি শুকনো হওয়ায় বহনে যেমন সুবিধা তেমনি সংরক্ষণও করা যায় দীর্ঘদিন।
কারিগররা জানান, '১ মণ দুধ থেকে ১২ কেজি সন্দেশ তৈরি হয়। চুলায় দুধের সাথে চিনি মাখিয়ে অতিরিক্ত তাপ দিয়ে ধীরে ধীরে এটি বানানো হয়।'
দেশে এলাকাভেদে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই ও কুমিল্লার রসমালাই। তেমনি জামালপুরের মিষ্টির ক্ষেত্রে প্যারা সন্দেশের বিশেষত্ব থাকলেও প্রচারের অভাব রয়েছে। তাই সঠিকভাবে প্রচারণা চালানো গেলে এটিও জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাবে বলে আশা বিশিষ্টজনদের।
সমাজ প্রতিনিধিরা জানান, 'শুধুমাত্র ছানা দিয়ে এ প্যারাটি তৈরি করা হয়। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও এ অঞ্চলের ঐতিহ্য। প্রচারের অভাবে জিআই পণ্য হিসেবে এটি স্বীকৃতি পাচ্ছে না।'
জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ এর অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, 'জেলা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কাজ করলে জামালপুরের পণ্য হিসেবে প্যারা সন্দেশ এর স্বীকৃতি লাভ করবে।'
সরিষাবাড়ীর ১৫ থেকে ২০টি মিষ্টির দোকানে গড়ে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত প্যারা সন্দেশ তৈরি হয়। মানভেদে প্যারা সন্দেশের প্রতিকেজির দাম ৪০০ থেকে ৫২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।