দালাল নির্ভরতায় বাড়ছে বিদেশযাত্রার খরচ; নারী-পুরুষ বৈষম্যেও বাড়ছে ব্যয়

বিমানবন্দরে কয়েকজন প্রাবসযাত্রী
বিমানবন্দরে কয়েকজন প্রাবসযাত্রী | ছবি: এখন টিভি
1

কাগজে কলমে সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর খরচ পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা হলেও বাস্তবে এটি দ্বিগুণ, কখনও তিনগুণ। আবার পুরুষ অভিবাসী কর্মীর নিয়োগে খরচ নারী অভিবাসী কর্মীর চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি। এ টাকার বড় অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগী বা দালাদের পকেটে। রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ না করতে পারলে ব্যয় কমানো সম্ভব নয়- বলছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

২০২২ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছর কেবল সৌদি আরবে গেছেন সাত লাখের বেশি কর্মী। বর্তমানে দেশটিতে যেতে একজন পুরুষ কর্মীর খরচ করতে হয় প্রায় পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা। আরেক শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় যেতে চলতি বছর অনেকেই ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন।

২০২০ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, পুরুষ অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয় নারী অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। দক্ষ পুরুষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এ ব্যয় চার লাখ ২৭ হাজার ২১৭ টাকা। যাদের মাসিক আয় ২৯ হাজার ৪৭৭ টাকা। অদক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে সে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৭৭ হাজার ৯২৭ টাকা। আর গৃহকর্মীদের বিদেশ গমনের খরচ পড়ে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৬৪ টাকা। মাসিক ১৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বেতনে এ ব্যয় তুলতে তাদের সময় লাগে প্রায় সাত মাস।

সরকারি এ আয়-ব্যয়ের সঙ্গে বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। কোনো কোনো দেশে যেতে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এ ব্যয়ের টাকার একটি অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল বা দেশের সাব-এজেন্টদের পকেটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ অভিবাসন খরচের বাইরে অনির্ধারিত বা হিডেন কস্ট অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মাত্রাতিরিক্ত উড়োজাহাজ ভাড়াকেও দায়ী করছেন তারা।

আরও পড়ুন:

আইএলও’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মাহসিন হামুদা বলেন, ‘২০২৩ সালেও কম ছিল, এবছর এসে কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। এখানে কিন্তু হিডেন কস্টটা বেড়ে যাচ্ছে। হিডেন কস্ট কী? সাব এজেন্ট কস্ট। যেটা আসলে এজেন্টও জানছে না কতটা নিচ্ছে।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সবক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ইন্টারমেডিয়টেরি গ্রুপ কিন্তু কাজ করে। মাঝখানে যে হতবদল হয়,সেসব মানুষরাও কিন্তু কিছু কিছু ব্যবসা করে।’

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সংখ্যা বিবেচনার চাইতে মানের দিকে দৃষ্টি দিতে বলছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ না করতে পারলে অভিবাসন ব্যয় কমানো সম্ভব নয় বলেও দাবি তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার দাম বেধে দিয়ে কোনোদিন ব্যয় কমাতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি মহলের দুর্নীতি, রিক্রুটিং এজেন্সির যে অন্যায় চেষ্টা লোক পাঠানোর এবং অ্যাকাউন্টেবল না থাকা— এগুলো যতদিন পর্যন্ত বন্ধ না হবে ততদিন এ উচ্চ অবাসন ব্যয় থেকে বের হওয়া যাবে না।’

সংকট সমাধানে এজেন্সি ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পলিসি মেকিংয়ে যুক্ত করার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। দালালের দৌরাত্ম্য কিভাবে বন্ধ করা যায় সেই পথও সরকারকে দেখাতে হবে বলছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।

এসএস