অ্যাসিস্ট্যান্ট ভেন্টিলেশনে হাদি, মেশিনের সাপোর্টে শ্বাস নিচ্ছেন: ডা. মিতু

শরিফ ওসমান হাদি, ডা. মাহমুদা মিতু
শরিফ ওসমান হাদি, ডা. মাহমুদা মিতু | ছবি: সংগৃহীত
1

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি অ্যাসিস্ট্যান্ট ভেন্টিলেশনে আছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ও দলটি থেকে ঝালকাঠি–১ (রাজাপুর–কাঁঠালিয়া) আসনে মনোনয়ন পাওয়া ডা. মাহমুদা মিতু। আজ (শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।

পোস্টে মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত হাদি অ্যাসিস্টেট ভেন্টিলেশনে, তার মানে সে নিজে থেকে শ্বাস নিচ্ছে ব্যাপারটা এমন না। সে নিজে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে আর মেশিন সেই শ্বাসকে সাপোর্ট দিচ্ছে।’

তিনি লেখেন, ‘২টা ৪৪ মিনিটে বাসা থেকে বের হইছিলাম জাস্ট এক সেকেন্ডে, দৌড় দিছি একটা ব্যাটারি রিক্সা নিয়ে। এক ইঞ্চি জ্যাম ছিলো না তারপর ও মনে হচ্ছিলো মালিবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেল যেন হাজার মাইল, রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। সেই থেকে হাদির সঙ্গেই গিয়ে দেখি কার্ডিয়াক এরেস্ট অলরেডি সিপিআর দিয়েও রেগুলার পালস আসেনি তখন। পিপল মিড ডায়েলেট দেখেছি। তারপর জাহিদ স্যার, আহাদসহ নিউরোলজি, ইএনটি, থোরাসিক সব টিম আসলো, ওটি হলো, এর মাঝখানে অনেক কিছু।’

তিনি আরও লেখেন, ‘হাদির স্কালের একসাইডের হাড় খুলে ডিকম্প্রেশন করার সঙ্গে সঙ্গেই স্পন্টেনিয়াস শ্বাস নেয়া প্রথমে শুরু করে। ব্রেইনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে ভেতরের চাপে ব্রেইন টাইট হয়ে ছিলো। তারপর আরও কথা লিখতে ইচ্ছা করছে না। সব লেখা উচিত ও না হয়তো।’

আরও পড়ুন:

গতকাল (শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর) থেকে অনেকজন আপডেট জানার জন্য ডা. মিতুকে ফোন দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘তারপর হাদিকে প্রোটোকলসহ এভাকেয়ারে নেয়া হচ্ছিলো। আমি, আহাদ, জারা, সালমান সামনের গাড়িতে, পেছনে এম্বুলেন্স। আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না ওই মুহূর্ত আমার কেমন লাগছিলো। জারা বার বার আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার মনে বলছিলাম, কিরে ভাই এম পি হওয়ার আগেই ভিআইপি প্রোটকল? এইভাবে সবাইকে হারিয়ে দিলি?’

তিনি লেখেন, ‘হাদি দেখ, তোরে প্রোটকল দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হাদি দেখ, তোর জন্য বাংলাদেশের রাস্তা খালি করে রাখা হইছে যাতে এক সেকেন্ড জ্যাম না লাগে। হাদি তুই তো এমপি মন্ত্রীর চেয়েও অনেক বড়। ভিআইপিদের জন্য যখন রাস্তা খালি করা হয় মানুষ গালাগালি করে তোর জন্য হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে রাজী আছে হাসিমুখে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘হাসপাতালের দুই পাশে এম্বুলেন্স বের হওয়ার সময় যেভাবে আল্লাহ হু আকবর ধ্বনি আসছিলো।’

আরও পড়ুন:

এনসিপির এ নেত্রী লেখেন, ‘আমি কি লিখছি জানি না। আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো। ২৪ নভেম্বর দেখা হলো, কি দরদ মিতু আপুর প্রতি। আমি সেদিন নান্নু ভাইর জন্য খাবার কিনছিলাম। ওরে দুইটা মোমো কেন খাওয়াইলাম না। আমাদের এত তাড়া থাকে কেন? ওর কানে কানে একটা কথাও বলছিলাম। আমার বর হাদিকে টাকা পাঠাতে চাইলো আর পাঠানো হলো না কেন? আমাদের এত কিসের তাড়া?’

তিনি লেখেন, ‘মেয়েরা স্কুলের সামনে হাদিকে দেখছে, ছোট মেয়েটা বলছিলো আমি বড় হলে হাদিকে ভোট দেবো। আমি এ কথা ওরে জানাই নাই। মানুষ মরণাপন্ন হলেই আমাদের এত মায়া জেগে ওঠে। এর আগে কেন মনে রাখি না? কেন মনে রাখি না আমরা কেউ থাকবো না আজীবন?’

তিনি আরও লেখেন, ‘ওর প্রোফাইলে আমার ছবিটা আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার করে দিয়ে গেলো। আল্লাহ আমার সমস্ত শক্তি শেষ..। বাংলাদেশের লাল পতাকাটার মাঝে একটা গুলি করে গেলো। আমি বোধহয় আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবো না।’

সবশেষ মিতু লেখেন, ‘পাশে তো অনেকগুলো খাওয়ার স্টল ছিল। আমার এখন কেন মনে পড়লো? তোরে আমি কিছু খাইতে সাধি নাই কেন? বাসায় গিয়েই আবার ছবিটা আপলোড দিলি... আমার মাথা আর কাজ করছে না।’

এসএস