অগ্নি-দুর্ঘটনা: সীমিত সামর্থ্যে কতটা প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস?

গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার দাবি

সম্প্রতি কড়াইল বস্তিতে আগুন | ছবি: সংগৃহীত
0

আগুনের সাথে বসবাস, এই শহরে যেন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়। বছর-মাস কিংবা কয়েকদিনের ব্যবধানে আগুনের পুনরাবৃত্তিতে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, প্রতিবছর অগ্নি-দুর্ঘটনার সাথে বাড়ছে সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ। তবে সীমিত সামর্থ্যে ঝুঁকি মোকাবিলায় বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। নগরবিদরা বলছেন, অগ্নি-দুর্ঘটনা রোধে যাবতীয় গাফিলতির বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

নগরে পোড়া গন্ধ। আগুনের সাথে বসবাসই যেন নিয়তি। নাগরিক যাপনে এসবে এখন অভ্যস্ত মানুষ। পোড়ে মানুষ, পোড়ে গগনচুম্বী ভবন থেকে বস্তি। আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ মানুষের তালিকা দীর্ঘ হয় টালিখাতায়। আগ্নিকাণ্ডে দিন দিন বাড়ছে প্রাণনাশের শঙ্কা। সাথে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও।

পোশাক কারখানা, রেস্টুরেন্ট, কেমিক্যাল গোডাউন কিংবা শপিং মলের অন্দর পুড়ে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি নিয়মিত ঘটনা এই নগরীতে। যার সবশেষ সর্বগ্রাসী রূপ দেখলো কড়াইল বস্তিবাসী। প্রায় দেড় হাজার ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হাজারো মানুষ।

গেল বছর বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় ৪৬টি তাজা প্রাণ। এফআর টাওয়ারে নিহত হয় ২৬ জন। চলতি বছর অক্টোবরে শিয়ালবাড়িতে ১৬ জনের অকাল মৃত্যু হয় অগ্নিকাণ্ডে। শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুনে হতাহতের ঘটনা না থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিটি অগ্নি দুর্ঘটনার পর শুরু হয় তদন্ত আর নোটিশ দেয়ার তোড়জোর। চলে অভিযান। তারপরও মেলে না সমাধান।

নগরবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত সম্প্রসারণে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বাড়ছে অগ্নি-ঝুঁকি। আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন শিল্পকারখানা বন্ধসহ বিল্ডিং কোড মানায় কঠোর অবস্থান নেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

নগরবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির বিষয়গুলো আমাদের আইন এবং তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন না করা, যারা বিল্ডিং বা ফ্যাক্টরি মালিক তারাও আইন বা অগ্নি নিরাপত্তা সেই অর্থে আমলে নিই না। সরকারের যত সংস্থা আছে সবারই গাফিলতি আছে। এ গাফিলতিগুলো চিহ্নিত করে যারা কর্মকর্তা আছেন তাদেরও আইনের আওতায় নেয়া উচিত।’

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে সারাদেশে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২শ' ৪৬ কোটি টাকারও বেশি। পরের বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬শ'টিতে। ক্ষতির পরিমাণ ২শ' ১৮ কোটি টাকা। ধারাবহিকভাবে বেড়ে ২০২২ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ হাজারে। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়ায় ৩শ' ৪২ কোটি টাকা।

সময় গড়ায়, পাল্লা দিয়ে বাড়ে ক্ষতির পরিমাণও। ২০২৪ সালে ২৬ হাজার অগ্নি দুর্ঘটনার বিপরীতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৪শ' ৪৬ কোটি টাকা।

গবেষণা বলছে, অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা সবচেয়ে বেশি আবাসিক ভবন আর শিল্প কারখানা অবস্থিত ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর আর নারায়ণগঞ্জে। ঝুঁকি কমাতে ভবন চিহ্নিত আর নোটিশ দেয়াই যেন কর্তৃপক্ষের একমাত্র কাজ। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট, লোকবল আর আধুনিকায়নের অভাবে ফায়ার সার্ভিসও ঘুরপাক খাচ্ছে সীমিত সার্মথ্যের বৃত্তে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই বিধায় বেশি মাত্রায় করা যায় না। এটা আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা। পরিদর্শক প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আমাদের যে টিম অ্যান্ড ডি সে অনুযায়ী ২৬৮ জন থাকার কথা। ২৬৮ জন দিয়ে পুরো দেশ কাভার করা অসম্ভব একটা বিষয়। অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ চলছে। ইন্ডাস্ট্রি বেশি বেশি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে যাতায়াতের ইস্যু আছে। সিটি শহরগুলোতে সাধারণত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে।’

গাফিলতি আর নজরদারির অভাব ঘুচিয়ে আগুনের চক্রাকার থেকে কবে মিলবে মুক্তি? কবে নিরাপদ হবে নগর? সে প্রশ্নের উত্তর মেলাতে এবারও কি ব্যর্থ হবে রাষ্ট্র?

ইএ