আমিনবাজার-চন্দ্রা হাইওয়ে: ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা; দায় এড়াচ্ছেন যাত্রী–চালক উভয়ই

ঝুঁকি নিয়ে মাঝরাস্তায় চলন্ত বাসে যাত্রী উঠছেন | ছবি: এখন টিভি
0

মহাসড়কে যেন আইন অমান্য করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আমিনবাজার–চন্দ্রা হাইওয়েতে প্রায় প্রতি মুহূর্তে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে সার্ভিস লেন ডিঙিয়ে বাসে ওঠা বা নামার দৃশ্য। যাত্রীরা দায় চাপান চালকদের ওপর, আর চালকরা বলেন যাত্রীরাই নিয়ম মানেন না—দুই পক্ষই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেপরোয়া থ্রি-হুইলারের কথাও সামনে চলে এসেছে। হাইওয়ে পুলিশের মতে, থ্রি-হুইলারের লাগাম টেনে ধরা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানো গেলে এ বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে আসবে।

রাস্তার মাঝখানে বাস থামা নিষেধ থাকলেও ঘটছে উল্টো। হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠা ও নামার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যাত্রীরা। সার্ভিস লেনের প্রাচীর ডিঙিয়ে মাঝের লেনে আসছেন তারা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেন ভুলে গেছেন।

আমিনবাজার-চন্দ্রা হাইওয়েতে এমন দৃশ্য নিত্যদিনের। একদিকে দুর্ঘটনার শঙ্কা, অন্যদিকে আইন অমান্য করার এ প্রতিযোগিতা মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করছে। চালক, হেল্পার বা যাত্রীর কারো কাছে নিয়ম মানার বালাই নেই।

চালক ও হেল্পাররা দায় চাপাচ্ছেন যাত্রীদের ওপর। তাদের দাবি, যাত্রীদের রাস্তার মাঝখানে গাড়িতে ওঠা-নামা না করার নিয়ম জানানো হলেও তা মানা হয় না।

অন্যদিকে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রাস্তার মাঝখানে নামতে বাধ্য করা হয় তাদের। গাড়ি সাইড করতে বলা হলেও চালক ও হেল্পাররা তা মানেন না।

স্থানীয়রা বলছেন, মাঝের লেনে বাস থামানো যেমন আইনবিরোধী, ঠিক তেমনই প্রাচীর ডিঙিয়ে মাঝের লেনে আসা ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যক্তিগত সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো সড়কে যে দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায়ভার কার—তা নির্ধারণ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আমিনবাজার থেকে চন্দ্রা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩৭.২ কিলোমিটার। এই সড়ক দুই থানার দায়িত্বে রয়েছে এবং এর ওপর ১৬টি যাত্রী ছাউনি ও বাসস্টপেজ রয়েছে। গত এক বছরে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। এর মধ্যে সার্ভিস লেনে বাস ওঠানামা ও যাত্রী পারাপারের কারণে ঘটেছে ৪২টি দুর্ঘটনা।

সড়কে চলাচলরত অবৈধ তিন চাকার যানবাহন নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন বাসচালকরা। তারা দাবি করেছেন, অটোরিকশার কারণে বড় গাড়িগুলোর জন্য ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। এজন্য যাত্রী তুলতে তারা অনেকাংশে বাধ্য হন। হাইওয়ে পুলিশও স্বীকার করেছে, প্রায় ৪০ লাখ অবৈধ থ্রি-হুইলারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার ড. আ. ক. ম. আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ‘এত বড় একটি কমিউনিটিকে অফ করতে গেলে বা নিয়মের মধ্যে আনতে গেলে অসন্তোষ তৈরি হবে। এজন্য এটা জাতীয় ও সরকারি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে টোটাল ম্যানেজমেন্ট করা উচিত। থ্রি-হুইলারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা, আইনের আওতায় আনা এবং বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা—এসব পদক্ষেপ ছাড়া সিস্টেম কাজ করবে না।’

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সচেতনতা ও আইন প্রয়োগ ব্যর্থ হলে নিয়ন্ত্রণহীন এই সড়ক মহাবিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। সময় কমে এসেছে, তাই এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

এসএইচ